kasba gangrape and supreme court

ব্যুরো নিউজ ৩০ জুন: দক্ষিণ কলকাতার সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজ্যজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে এবং এবার সুপ্রিম কোর্টেও বিষয়টি গড়িয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবিতে আবেদন জানানো হয়েছে, যখন কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা ও তার পরিবারকে জাতীয় মহিলা কমিশনের থেকে লুকিয়ে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের আর্জি

আইনজীবী সত্যম সিংহ কসবা গণধর্ষণকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন। তার আবেদনে দেশের শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। সত্যম সিংহ অভিযোগ করেছেন যে, রাজ্য পুলিশের তদন্তে নিরপেক্ষতা নেই এবং অভিযুক্তদের রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকায় দ্রুত সিবিআই তদন্ত ছাড়া প্রকৃত সত্য প্রকাশ অসম্ভব। আর্জিতে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আর্থিক সাহায্যেরও দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্রর বিতর্কিত মন্তব্যের উল্লেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, তাদের বক্তব্য তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে আবেদনকারীকে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে এবং খুব শীঘ্রই এর শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।

প্রভাবের আড়ালে নৈরাজ্য ; জানুন রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ধর্ষকের চরিত্র ।

জাতীয় মহিলা কমিশনকে অসহযোগিতার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

জাতীয় মহিলা কমিশনের (NCW) সদস্য অর্চনা মজুমদার কসবা কাণ্ডের তদন্ত ঘিরে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন যে, পুলিশ প্রশাসন তাকে তদন্তে সহায়তা করেনি, এবং ভিকটিম ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। গত রবিবার মহিলা কমিশনের তিন সদস্যের দল ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে প্রথমে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং ঘটনাস্থলের ছবি তোলা যাবে না বলেও জানায়।
অর্চনা মজুমদার দাবি করেছেন, “সকাল থেকে চেষ্টা করছি, কিন্তু কোথাও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। চারপাশে ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে। উপরের তলা থেকে নিচ পর্যন্ত সমস্ত ঘরে তালা ঝুলছে। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি তৎপরতা চলেছে, অথচ আজ ডেপুটি কমিশনার জানাচ্ছেন—ভিকটিম কোথায় আছেন, পুলিশ জানে না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ভিকটিমকে ‘লুকিয়ে রাখা হয়েছে’, যাতে তিনি বা সংবাদমাধ্যমের কেউই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন। অর্চনা মজুমদারের মতে, “ভিকটিমের বাড়িতে তালা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা পরিকল্পিত পদক্ষেপ।” এই ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য।

তদন্তের অগ্রগতি ও অভিযুক্তদের বয়ান বদল

কসবা গণধর্ষণকাণ্ডে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) সক্রিয় হয়েছে এবং তদন্তের গতি বাড়াতে এর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৯ জন করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র ও অন্য দুই অভিযুক্তের ঘরে হানা দিয়ে অপরাধের সময় পরা পোশাক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, কারণ ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঘটনার সময় অভিযুক্তরা ভিডিও ও ছবি তোলে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা সেই ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
সিসিটিভি ফুটেজও তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হয়ে উঠেছে। ঘটনাস্থল সরাসরি সিসিটিভির আওতায় না থাকলেও, কলেজ ক্যাম্পাসে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের চলাফেরার স্পষ্ট ছবি ফুটেছে ফুটেজে। পুলিশ ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে আরও চারটি নতুন ক্যামেরা বসিয়েছে। তবে, SIT জানিয়েছে যে জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা একাধিকবার তাদের বক্তব্য পাল্টেছে, যা তদন্তে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তাই এবার অভিযুক্তদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে।

কসবা কাণ্ডে প্রধান বিরোধী দল সরব অনুসন্ধানে এবং প্রতিবাদে !

অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক চাপানউতোর

এই ঘটনায় গত শনিবার কলকাতা হাইকোর্টেও জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে এবং পুলিশি তদন্তে হাইকোর্টের নজরদারি চেয়ে সোমবারও নতুন করে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। হাইকোর্টে কসবা কাণ্ডে দায়ের হওয়া সবকটি মামলার শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। অভিযুক্তদের রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং তাদের পূর্বের অপরাধমূলক ইতিহাস সামনে আসায় শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য অভিযুক্ত জইব আহমেদের কলেজে ভর্তির অনিয়ম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এবং সর্বোপরি তদন্তে স্বচ্ছলতার অভাব এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্যে সুপ্রিম কোর্টের তত্বাধিনে তদন্তের দাবি প্রবল হচ্ছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর