Kalimpong

ব্যুরো নিউজ ২৪ জুন : উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং ডুয়ার্সের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থিত কালিম্পং জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র লাভা। এটি পুরোপুরি পাহাড়ও নয়, আবার সমতলও নয়, এক অন্যরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে হাজির। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এবং স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসন এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। এখন থেকে লাভা ঘুরতে গেলেই পর্যটকরা পাবেন এক নিশ্চিত উপহার, যা তাঁদের মন জয় করার পাশাপাশি এলাকার অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অভিনব উপহারের ধারণা

লাভায় আসা পর্যটকদের জন্য এই বিশেষ উপহারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তাঁদের নিজস্ব বাড়ি বা জমিতে শতভাগ জৈব পদ্ধতিতে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছেন। উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে প্যাকেজিং এবং বিপণন—সব দায়িত্বই সামলাচ্ছেন তাঁরা। এই সমস্ত পণ্য পর্যটক ও সাধারণ মানুষের কাছে একেবারে ন্যায্যমূল্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে একদিকে যেমন পর্যটকরা খুশি হবেন, তেমনি স্থানীয় মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা বৃদ্ধি পাবে।

উৎসবের আমেজ দার্জিলিংয়ে: DHR ‘টয় ট্রেন ‘ সামার ফেস্টিভালে সাজ সাজ রব!

উপহার সামগ্রীর বৈচিত্র্য

এই ‘উপহার’ প্যাকেজে থাকছে স্থানীয় মহিলাদের উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, যেমন—হলুদ, মধু, ছাতু, গোলমরিচ, বাজরা এবং করলার চিপস। এর পাশাপাশি, বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রীও এই তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে। এই উদ্যোগকে আরও সুসংহত করতে কালিম্পং জেলার ব্লক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি আধুনিক প্যাকেজিং ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে লাভাতেই এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম বলে জানা গেছে, যা এই প্রকল্পের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আধুনিকীকরণ ও বিপণন কৌশল

বিডিও ভারতী চিকবড়াইক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “এখানকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনে যুক্ত থাকেন। তাঁদের সেই কাজকে আরও সুনিয়ন্ত্রিত করে প্যাকেজিং, ব্র্যান্ডিং ও বিপণনের সুবিধা করে দেওয়াই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এর ফলে যেমন আয় বাড়বে, তেমনই পর্যটকদের হাতে লাভার নিজস্ব স্বাদের পণ্য তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।”
প্যাকেটজাত এই পণ্যগুলি বিক্রির জন্য লাভার সৃষ্টিশ্রী স্টল, স্থানীয় হাটবাজার, সরকারি আউটলেট, মেলা এবং গোর্খে হাটের মতো বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে। স্থানীয় নেপালি ভাষায় এই পণ্যের ব্র্যান্ড নাম রাখা হয়েছে ‘কোসেলি’, যার বাংলা অর্থ ‘উপহার’। লাভার মোনাস্ট্রি, নকদারা-সহ অন্যান্য জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রেও এই পণ্যগুলি সহজলভ্য হবে। লাভায় প্রবেশের প্রতিটি গেটপয়েন্টে একটি করে স্টল থাকবে। পাশাপাশি, চলতি মাস থেকেই বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে অনলাইনেও এই পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যা পণ্যের বাজার আরও প্রসারিত করবে।

গরমে শান্তির ঠিকানা: দার্জিলিঙের মনোরম লেক ও ঝরনার হাতছানি!

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভূমিকা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

লাভা ব্লক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এখানে মোট ৭৩৩টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে, যার আওতায় ৬,০৮৭ জন মহিলা কাজ করছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতভিত্তিক ৭টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী সংঘও সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি এই প্যাকেজিং ইউনিটের উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালিম্পং জেলার জেলা শাসক বালাসুব্রহ্মণিয়ণ টি., পশ্চিমবঙ্গ স্টেট রুরাল লাইভলিহুড মিশনের নির্দেশক কুহুক ভূষণ এবং জিটিএ-র পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের প্রকল্প নির্দেশক সুমেধা প্রধান প্রমুখ। এই উদ্যোগটি লাভাকে একটি নতুন পর্যটন গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতির বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর