Gaza Peace Deal comedy

শুদ্ধাত্মা মুখার্জি , ১৫ অক্টোবর ২০২৫ :  আমি যদি বলি, সম্প্রতি মিশরের শারম এল-শেখ-এ যে গাজা ‘শান্তি’ সম্মেলন হয়ে গেল, তা আসলে যুদ্ধ থামানোর জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, যতটা ছিল একটি জমজমাট রাজনৈতিক কমেডি শো—তাহলে কি খুব ভুল বলা হবে? চারজন মধ্যস্থতাকারী দেশ চুক্তি সই করল, কিন্তু যাদের মধ্যে মারামারি—সেই ইসরায়েল আর হামাসই সইয়ের সময় গরহাজির! ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, ঝগড়া মিটিয়ে ফেলার পর আমরা চারজন মিলে সার্টিফিকেট সই করে দিলাম, আর ঝগড়া করা লোকগুলো তখন নিজেদের ঘর গোছাচ্ছে।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসির কথায়, এই চুক্তি নাকি ‘আশার আলো’ নিয়ে এসেছে। তবে আমার চোখে তো বরং এই চুক্তির ভিত্তিই বড্ড নড়বড়ে মনে হলো। এই চুক্তিটা এখন শুধুই একটি ‘ফটো অপ’—যেখানে যুদ্ধবিরতি হলো কেবল বন্দি বিনিময়ের জন্য একটা ‘স্ট্র্যাটেজিক রিলিফ’। ইসরায়েল তাদের লোকজনকে ফিরে পেল, আর হামাস পেল তাদের প্রায় ২,০০০ আটক যোদ্ধাকে। অর্থাৎ, দু’পক্ষই এখন একে অপরের ওপর পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত।

 

শান্তি চুক্তির প্রধান আকর্ষণ: ট্রাম্প ও মেলোনি

এই কূটনৈতিক মেলা আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ নিঃসৃত মন্তব্য, আর ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির অভিব্যক্তিতেই শিরোনাম কেড়ে নিল। মনে হচ্ছিল, গাজার যুদ্ধ নয়, বরং ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অভিপ্রায় ছিল সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

ট্রাম্প সাহেব মঞ্চে উঠেই জর্জিয়া মেলোনিকে দেখে যা বললেন, তা রীতিমতো ভাইরাল। তিনি বললেন, “আমি ওকে সুন্দরী বলতে পারবো না, কারণ তাহলে আমার রাজনৈতিক জীবন শেষ। কিন্তু আমি ঝুঁকি নেবো। আপনি সুন্দরী ডাক শুনতে আপত্তি করবেন না, তাই তো? কারণ আপনি সুন্দরী।” এই মন্তব্য শুনে মেলোনির মুখভাব এমন ছিল যেন তিনি প্রকাশ্যে একটি তেতো পিল গিলেছেন। ইন্টারনেট অবশ্য দ্বিধাবিভক্ত—কেউ বললো ‘ক্লাসিক ট্রাম্প’, আর কেউ বললো ‘অশালীন’। তবে এর মাঝেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান তাঁকে ধূমপান ছাড়ার উপদেশ দিয়ে আরেক দফা মনোযোগ কাড়লেন। বেচারি মেলোনি! গাজার শান্তি সম্মেলনে এসে তাঁর নিজের সৌন্দর্য ও অভ্যাস নিয়েই কথা শুনতে হলো!

Gaza Peace Deal : হামাস ২০ জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিল তবে বন্দি মুক্তির আবহে সুপারনোভা উৎসবের জীবিত যুবকের আত্মহত্যা

নোবেল তোষামোদ , পাকিস্তানের মার্কিন অনুগত্য

কিন্তু সবচেয়ে নজর কারার মুহূর্তটি তৈরি করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি ট্রাম্পের এতই গুণগান গাইলেন যে, প্রায় হাঁটু গেড়ে বসার জোগাড়! তিনি ঘোষণা করলেন, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত থামাতে ট্রাম্পের ‘অসামান্য অবদানের’ জন্য তিনি তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন।

শরিফ যখন নোবেল ঘোষণার তোষামোদ করছিলেন, ঠিক তার পিছনেই ছিলেন জর্জিয়া মেলোনি। ক্যামেরা ধরেছিল সেই দৃশ্য। তৎক্ষণাৎ তিনি হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন, যেন নিজের হাসি বা বিরক্তি চেপে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা! হাত নামানোর পরেও তাঁর মুখে ছিল এক শীতল, নির্বিকার অভিব্যক্তি। ভাবখানা এমন, “আর কত শুনতে হবে?” ভারতের তরফ থেকে বারবার ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও, এই ধরণের প্রকাশ্যে তোষামোদ দেখে মেলোনির প্রতিক্রিয়া একেবারেই স্বাভাবিক ছিল—আসল সত্যটা চাপা দিতে চাওয়া বাড়াবাড়ির দিকে তার বিরক্তি প্রকাশ পেল।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারকে ডাকলেন বটে, কিন্তু তিনি যখন বক্তৃতার জন্য তৈরি হলেন, ট্রাম্প তখন অন্য দিকে মন দিলেন। এমন হাই-প্রোফাইল মঞ্চে একজন বিশ্বনেতাকে এইভাবে ‘ঝুলিয়ে রাখা’র দৃশ্যও কম হাসির খোরাক যোগালো না।

Gaza Peace Deal : যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজা থেকে আরও ৪ বন্দির দেহ ফেরত , বিপুল যোশিকে মৃত ঘোষণা ইসরায়েলের

ভারতের নীরব বার্তা: ‘আমি আসিনি, কারণ…’

এত কিছু যখন চলছে, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগলো—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলনে গেলেন না কেন? কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর তো একে “সুযোগ হাতছাড়া” বলে বেশ জলঘোলা করলেন।

কিন্তু আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদির অনুপস্থিতি আসলে তিনটি স্পষ্ট,  কূটনৈতিক বার্তা দিয়েছে:

  1. নো ট্রাম্প তোষামোদ: ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখবে। সে আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া চুক্তিতে সায় দিতে প্রস্তুত নয়, এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মতো ট্রাম্পের তোষামোদ করে ‘ভ্যাসাল স্টেটে’ পরিণত হতে চায় না।
  2. পাকিস্তানিদের সাথে মঞ্চ ভাগ নয়: স্পষ্টতই ভারতীয় নেতৃত্ব পাকিস্তানের নেতৃত্বের সাথে একই ভূ-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে থাকতে চায় না, বিশেষ করে যখন শরিফ সাহেব নোবেল-নাটক করছেন।
  3. অনুপস্থিত পক্ষ মানেই অর্থহীন চুক্তি: ভারত এমন কোনো চুক্তিকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেবে না, যেখানে সংঘাতের মূল পক্ষগুলোই উপস্থিত নেই। চুক্তিটি ভঙ্গুর এবং এটি স্রেফ ফটো-অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য।

সুতরাং, এই সম্মেলন গাজার শান্তি নয়, বরং রাজনৈতিক ড্রামা, ব্যক্তিগত অহং এবং কূটনৈতিক কৌতুকের এক দারুণ মিশ্রণ ছিল। এই ‘শান্তি’ চুক্তি হয়তো কেবল এই সংঘাতের একটা অধ্যায় শেষ করলো, কিন্তু পুরো নাটকটি যেন বলে গেল—আসন্ন আরও বড় সংঘাতের জন্য এখন আর কেউ কারও কাছে দায়বদ্ধ নয়। ইসরায়েল বন্দি পেল, হামাস তাদের যোদ্ধাদের। এবার তারা যার যার মতো নিজেদের যুদ্ধ শুরু করতে পারে। কূটনৈতিক ভাঁড়ামো শেষ।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর