Basudev carrying son vasudeva

ব্যুরো নিউজ ১৫ আগস্ট ২০২৫ : ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫২ তম শুভ আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে সমগ্র ভারতজুড়ে ভক্তদের মধ্যে এক অন্যরকম আনন্দ ও ভক্তিপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় দেবকী এবং বাসুদেবের পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই বছর, জন্মাষ্টমী ১৫ এবং ১৬ আগস্ট, এই দুই দিন ধরে পালিত হবে। তারিখের এই ভিন্নতা হিন্দু পঞ্জিকা এবং বিভিন্ন ঐতিহ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে, যা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

 

গুরুত্বপূর্ণ তারিখ এবং সময়সূচী:

  • শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী: শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫
  • ইস্কন জন্মাষ্টমী: শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • দহি হান্ডি: শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • নিশিতা পূজা মুহূর্ত: ১৬ আগস্ট রাত ১২:০৪ থেকে ১২:৪৭ পর্যন্ত (৪৩ মিনিট)
  • মধ্যরাতের মুহূর্ত (কৃষ্ণের জন্ম): ১৬ আগস্ট রাত ১২:২৬
  • চন্দ্রোদয় (চন্দ্রোদয়): কৃষ্ণ দশমীর দিন রাত ১০:৪৬
  • কৃষ্ণ অষ্টমী তিথি শুরু: ১৫ আগস্ট রাত ১১:৪৯ থেকে
  • কৃষ্ণ অষ্টমী তিথি শেষ: ১৬ আগস্ট রাত ৯:৩৪ পর্যন্ত
  • পারানা (ব্রতভঙ্গ): ১৬ আগস্ট ভোর ৫:৫১-এর পর, দেব পূজা এবং বিসর্জনের পর।

 

মহাভারতের শিক্ষা: ‘যা ঘটে, ভালোর জন্যই ঘটে’ – শ্রীকৃষ্ণ-অর্জুন প্রসঙ্গ

শহর অনুযায়ী নিশিত পূজার সময়:

ভগবান কৃষ্ণের জন্মের পবিত্র মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত নিশিত পূজা ভারতের বিভিন্ন শহরে সামান্য ভিন্ন সময়ে পালিত হবে।

  • দিল্লি: রাত ১২:০৪ – ১২:৪৭
  • কলকাতা: রাত ১১:১৯ (১৫ আগস্ট) – ১২:০৩ (১৬ আগস্ট)
  • মুম্বাই: রাত ১২:২০ – ১:০৫
  • পুনে: রাত ১২:১৭ – ১:০২
  • বেঙ্গালুরু: রাত ১২:০১ – ১২:৪৭
  • চেন্নাই: রাত ১১:৫১ (১৫ আগস্ট) – ১২:৩৬ (১৬ আগস্ট)
  • হায়দ্রাবাদ: রাত ১১:৫৮ – ১২:৪৩
  • জয়পুর: রাত ১২:১০ – ১২:৫৩
  • লখনউ: রাত ১১:৫৪ – ১২:৩৮
  • আহমেদাবাদ: রাত ১২:২২ – ১:০৬

 

জন্মাষ্টমী পালনের ভিন্নতা:

দৃক পঞ্জিকা অনুসারে, ২০২৫ সালে অষ্টমী তিথি ১৫ আগস্ট রাত ১১:৪৯ মিনিটে শুরু হয়ে ১৬ আগস্ট রাত ৯:৩৪ মিনিটে শেষ হচ্ছে। তবে এই সময়ে রোহিণী নক্ষত্রের যোগ নেই। এই কারণেই কিছু ঐতিহ্য অনুসারে ১৫ আগস্ট এবং কিছু ঐতিহ্য অনুসারে ১৬ আগস্ট জন্মাষ্টমী পালিত হবে।

  • স্মার্ত সম্প্রদায়: এই ঐতিহ্য অনুযায়ী, অষ্টমী তিথিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাই স্মার্তরা ১৫ আগস্ট মধ্যরাত্রে কৃষ্ণের জন্মোৎসব পালন করবেন।
  • বৈষ্ণব সম্প্রদায়: বৈষ্ণব ঐতিহ্য অনুযায়ী, রোহিণী নক্ষত্র এবং অষ্টমী তিথির যোগ থাকলে জন্মাষ্টমী পালিত হয়। যেহেতু এই বছর এই যোগ হচ্ছে না, তাই অনেক বৈষ্ণব ভক্ত ১৬ আগস্ট জন্মাষ্টমী পালন করবেন। ইস্কন মন্দিরগুলোও এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে ১৬ আগস্ট মহা সমারোহে জন্মাষ্টমী উদযাপন করবে।

 

পূজা পদ্ধতি এবং আচার:

জন্মাষ্টমীর দিনে ভক্তরা উপবাস রাখেন এবং বিশেষ পূজার আয়োজন করেন। পূজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী নিচে দেওয়া হলো:

  • পূজা স্থান পরিষ্কার: পূজার স্থান এবং ঘর পরিষ্কার করে ফুল ও রঙ্গোলি দিয়ে সাজানো হয়।
  • বিগ্রহ স্নান: বাল গোপালের মূর্তি বা ছবিকে পঞ্চামৃত (দুধ, দই, মধু, ঘি এবং চিনি) দিয়ে স্নান করানো হয়।
  • সজ্জা: স্নানের পর বিগ্রহকে নতুন পোশাক, গয়না এবং মুকুট পরানো হয় এবং একটি সুন্দর দোলনায় বসানো হয়।
  • ভোগ নিবেদন: শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় তুলসী পাতা, মাখন, ফল এবং নানা ধরনের মিষ্টি যেমন পঞ্জিরি ও লাড্ডু নিবেদন করা হয়।
  • দীপ ও ধূপ: প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ধূপের সুগন্ধে একটি পবিত্র পরিবেশ তৈরি করা হয়।
  • মধ্যরাতের উদযাপন: নিশিতা পূজার সময়, অর্থাৎ মধ্যরাত্রে, ভজন-কীর্তন গেয়ে এবং দোলনা দুলিয়ে কৃষ্ণের জন্ম মুহূর্ত উদযাপন করা হয়।

 

Lord Krishna ; ধর্মের দিগ্বিজয়ী রূপ, কেন শ্রীকৃষ্ণ মুরারি ? জেনে নিন সেই ইতিহাস

দই হাড়ি এবং ইস্কন মন্দির:

১৬ আগস্ট, অর্থাৎ জন্মাষ্টমীর পরের দিন, সারাদেশের রাস্তায় দহি হান্ডি ( দই হাড়ি )  উৎসব পালিত হবে। এটি শ্রীকৃষ্ণের শৈশবের মাখন চুরির লীলার প্রতীকী উদযাপন। যুবকেরা মানুষের পিরামিড তৈরি করে মাখনের হাঁড়ি ভেঙে এই উৎসবে অংশ নেয়।
একই দিনে, ইস্কন মন্দিরগুলোতেও জন্মাষ্টমী মহা ধুমধাম করে পালিত হবে। এই মন্দিরগুলোতে ভজন, নৃত্যনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা দেখতে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করেন।

 

সাধু ও সন্ন্যাসীদের জন্য জন্মাষ্টমী:

সাধু এবং সন্ন্যাসীরা গভীর ভক্তি ও ভালোবাসার সঙ্গে এই উৎসব পালন করেন। তারা সাধারণত জল না খেয়ে কঠোর উপবাস পালন করেন এবং মধ্যরাত্রি পর্যন্ত কৃষ্ণ নাম জপ ও প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন। এরপর তারা বিগ্রহকে স্নান করিয়ে, সাজিয়ে এবং দোলনায় বসানোর মতো আচার পালন করেন এবং তারপরে উপবাস ভঙ্গ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর