ব্যুরো নিউজ ২৯ মে : দেশের সামরিক এবং আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের মধ্যে এক অভাবনীয় মেলবন্ধন ঘটল গতকাল, যখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান (COAS) জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী মধ্যপ্রদেশের চিত্রকূটে আধ্যাত্মিক গুরু জগদ্গুরু স্বামী রামভদ্রাচার্য্যের আশ্রমে গিয়ে তাঁর আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। এই সাক্ষাতের সময় জগদ্গুরু সেনাপ্রধানের কাছে এক জোরালো আবেদন রাখেন, যেখানে তিনি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-কে ভারতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার জগদ্গুরু নিজেই জেনারেল দ্বিবেদীর সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছেন, যিনি বুধবার শ্রী তুলসী পীঠ চিত্রকূট ধাম পরিদর্শন করেছিলেন।
রাম মন্ত্রে দীক্ষা ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ
জেনারেল দ্বিবেদীর আশ্রম পরিদর্শনের সময়, আধ্যাত্মিক গুরু জগদ্গুরু জানান যে, সেনাপ্রধানকে ‘রাম মন্ত্রে’ দীক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই সেই রাম মন্ত্র যা স্বয়ং মা সীতা থেকে হনুমানজি পেয়েছিলেন এবং এর শক্তিতেই লঙ্কা জয় করেছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান আশ্রমে সাধু-সন্ত এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন, যা জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
‘আমাকে পাক অধিকৃত কাশ্মির চাই…’: জগদ্গুরু’র অভূতপূর্ব ‘দক্ষিণা’ দাবি
এই পরিদর্শন সম্পর্কে বলতে গিয়ে জগদ্গুরু বলেন, “ভারতীয় সেনাপ্রধান আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি আমার থেকে রাম মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করেছেন— সেই একই মন্ত্র যা হনুমানজি সীতা জি থেকে পেয়েছিলেন এবং লঙ্কার উপর বিজয় অর্জন করেছিলেন। এরপর যখন ‘দক্ষিণার’ বিষয়টি আসে, আমি বললাম আমি এমন এক ‘দক্ষিণা’ চাইব যা কোনো শিক্ষক আগে কখনও চাননি। আমি বললাম, ‘আমার PoK (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর) চাই।’ তিনি আমার অনুরোধ গ্রহণ করেছেন। আমরা পাকিস্তানকে যথাযথ জবাব দিতে প্রস্তুত।”
অপারেশন সিঁদুর: ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা
উল্লেখ্য, সেনাপ্রধান (COAS) জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী এবং বিমানবাহিনীর প্রধান মার্শাল এপি সিং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এর আগে, ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের কর্মীদের জন্য ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল, যেখানে একটি অপারেশন কক্ষের ছবি দেখানো হয়েছিল যেখান থেকে সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এই পুস্তিকায় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী এবং বিমানবাহিনীর প্রধান মার্শাল এপি সিং-এর ছবিও রয়েছে।
পাহেলগাঁও হামলার জবাব এবং সামরিক সমঝোতা
গত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর অধীনে ভারত পাকিস্তানের উপর প্রতিশোধমূলক নির্ভুল হামলা চালায়। এটি ২২ এপ্রিল পাহেলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়ায় করা হয়েছিল, যেখানে ২৫ জন পর্যটক এবং একজন স্থানীয় গাইডকে সন্ত্রাসীরা ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছিল। এই অভিযানে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এর সন্ত্রাসী পরিকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পরবর্তীকালে পাকিস্তানি আগ্রাসনের কার্যকর জবাব দেয় এবং তাদের বিমানঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে। পাকিস্তানের ডিজিএমও তার ভারতীয় প্রতিপক্ষকে ফোন করার পর দুই দেশ সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।
উপসংহার
জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য্যের এই সাহসী এবং সরাসরি আবেদন, বিশেষ করে ‘দক্ষিণা’ হিসেবে PoK-এর দাবি, ভারতীয় সামরিক নেতৃত্বের সাথে আধ্যাত্মিক বন্ধনের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি কেবল দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি দৃঢ় সংকল্পই নয়, বরং ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর স্বপ্নের এক জোরালো আধ্যাত্মিক প্রতিধ্বনি।