ব্যুরো নিউজ ,৪ মে:গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক প্রাণ হারান। এই ঘটনার পর থেকেই নয়াদিল্লি সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদও কূটনৈতিক স্তরে সক্রিয় হয়ে ওঠে। দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন কার্যত তলানিতে ঠেকেছে।
পাক বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায়
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাবে। পাক বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের আগ্রাসী মনোভাব, উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং কার্যকলাপ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণেই রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ কাম্য বলে মনে করছে ইসলামাবাদ।
পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’ এক প্রতিবেদনে জানায়, পাক বিদেশ মন্ত্রী ইশক দার ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখারকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার জন্য বলা হয়েছে তাকে।
পাকিস্তান সরকারের তরফে বলা হয়েছে, শুধু সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে নয়, ভারতের জলনীতির বিষয়েও তারা আন্তর্জাতিক স্তরে আপত্তি তুলবে। বিশেষত, ভারতের ‘একতরফাভাবে’ সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েও রাষ্ট্রপুঞ্জকে অবগত করবে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের দাবি, ভারতের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের চুক্তির পরিপন্থী।
এর পাশাপাশি, সীমান্ত অঞ্চলে নিয়মিত সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনাও তুলে ধরা হবে বলে জানানো হয়েছে। পাকিস্তান মনে করে, ভারতের এই কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে এবং তা আন্তর্জাতিক শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য বিপজ্জনক।
এই পটভূমিতে রবিবার ইসলামাবাদে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়। যদিও ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা বিস্তারিত জানা যায়নি, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাক সেনার মুখপাত্র ও তথ্যমন্ত্রী উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের সামনে দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় গত ২২ এপ্রিল যে হামলা হয়েছিল, তা ভারতের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। নয়াদিল্লি সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদার করে এবং কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রম বাতিল করে দেয়। এই ঘটনার পরই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও স্থগিত হয়ে যায়।
পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের জাতিসংঘমুখী কূটনৈতিক তৎপরতা আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মোড় আনতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।



















