ব্যুরো নিউজ ২১ মে : পূর্ব বর্ধমানের গুসকারায় এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছেলেকে পুলিশ কর্মীরা বাবার ছিন্ন দেহাংশ কুড়িয়ে নিতে বলেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২০ মে, ২০২৫) সকাল ৮টা নাগাদ গুসকরায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে এবং পুলিশ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
ঘটনার বিবরণ: গুসকারা বাসস্ট্যান্ডের কাছে সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় ৬০ বছর বয়সী প্রদীপ কুমার দাস নামে এক লটারি বিক্রেতা একটি পাথর বোঝাই ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। প্রদীপ কুমার দাস গুসকরা পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিস্তলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বাড়ি ফিরছিলেন যখন এই দুর্ঘটনা ঘটে।
পুত্রের অভিযোগ: খবর পেয়ে প্রদীপ দাসের ২০ বছর বয়সী ছেলে সুদীপ দাস ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ততক্ষণে সেখানে ভিড় জমে গিয়েছিল। পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুদীপকে তার বাবার ছিন্ন দেহাংশ কুড়িয়ে নিতে বলেন বলে অভিযোগ। সুদীপ একটি বস্তায় করে সেই দেহাংশগুলি সংগ্রহ করেন এবং পুলিশকে দেহ তুলে নিতেও সাহায্য করেন। সংবাদমাধ্যমকে সুদীপ দাবি করেছেন, “পুলিশ দল একটি বস্তা হাতে দিয়ে আমাকে বলল, তুমিই তো [নিহত ব্যক্তির] ছেলে, তুমিই দেহাংশগুলো কুড়িয়ে নাও।” সুদীপ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং গুসকারাতেই বসবাস করেন।
পুলিশের তদন্তের নির্দেশ: এই ঘটনাটি যখন সামনে আসে, তখন ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার সায়ক দাস মঙ্গলবার (২১ মে, ২০২৫) জানান, “নিহত ব্যক্তির ছেলে (আজ পর্যন্ত) কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে আমি একটি ভিডিও দেখেছি। আমি জোনাল ডিএসপিকে (ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিন্ন ভিডিও: তবে, পূর্ব বর্ধমান পুলিশের একটি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে পরে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ভিডিওতে সুদীপ দাসকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, পুলিশ কর্মীরা তার বাবাকে বাবার দেহাংশ কুড়িয়ে নিতে “বাধ্য বা প্রভাবিত” করেননি। এই ভিডিওটি ঘটনার প্রকৃত চিত্র নিয়ে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের শাসনে পুলিশ সম্ভবত মানবতা হারিয়েছে। জড়িত পুলিশ কর্মীদের শাস্তি হওয়া উচিত।”
এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় এবং রাজ্যজুড়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।