ব্যুরো নিউজ, ০৫ই ডিসেম্বর ২০২৫ : গত নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে দেশের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইন্ডিগো (IndiGo)-র নেটওয়ার্কে অস্বাভাবিক সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল এবং অপারেশনাল বিপর্যয়ের ঘটনায় কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA) বিস্তারিত পর্যালোচনা বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ আগামী ২০২৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
মন্ত্রীর অসন্তোষ ও কঠোর নির্দেশ
অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী কিনজারাপু রাম মোহন নাইডু ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাতিল ফ্লাইট ও যাত্রী হয়রানির বিষয়ে মন্ত্রী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে হুঁশিয়ারি: মন্ত্রী DGCA-কে নির্দেশ দিয়েছেন, ফ্লাইট বাতিল বা বিপর্যয়ের সময় বিমান ভাড়া যেন কোনোভাবেই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো না হয়, সেই দিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
অগ্রিম সতর্কতা ও সহায়তা: ইন্ডিগো-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যাত্রীদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আগেভাগে জানাতে হবে। প্রয়োজনে হোটেল থাকার ব্যবস্থা সহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দ্রুত প্রদান করে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে হবে।
DGCA-র নিবিড় পর্যবেক্ষণ: মন্ত্রী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (AAI)-কে প্রতিটি বিমানবন্দরে পরিস্থিতি তদারকি করতে এবং আটকে পড়া যাত্রীদের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
Indigo Airlines Flight Cancel : পরিষেবা বিপর্যয়ে ইন্ডিগো: CEO-র ক্ষমা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে
ডিজিসিএ-র উদ্বেগ ও কারণ ব্যাখ্যা
DGCA জানিয়েছে, ইন্ডিগো’র দৈনিক বাতিল ফ্লাইটের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি—যা প্রায় ১৭০ থেকে ২০০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বৃহস্পতিবার এক দিনেই বাতিল হয়েছে ৫৫০টিরও বেশি ফ্লাইট।
ইন্ডিগো এই বিপুল সংখ্যক বাতিলের জন্য কর্মী পরিকল্পনায় ত্রুটি, নতুন ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস (FDTL) নিয়ম বাস্তবায়নে সমস্যা এবং মৌসুমী আবহাওয়াজনিত সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করেছে। তবে মন্ত্রী নাইডু জোর দিয়ে বলেছেন যে, নতুন নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তাগুলির সাথে মানিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গিয়েছিল।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস
ইন্ডিগো বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানিয়েছে, তারা ৮ ডিসেম্বর থেকে ফ্লাইট অপারেশন কমিয়ে দেবে যাতে এই বিপর্যয় কমানো যায়। তবে, তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী দিনগুলিতে আরও অতিরিক্ত ফ্লাইট বাতিল হতে পারে। সংস্থাটি আশ্বাস দিয়েছে, স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে ২০২৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
DGCA ইন্ডিগো’র কাছে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা চেয়েছে। এতে নতুন কর্মী নিয়োগ, বিমান যুক্ত করার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, রোস্টার পুনর্গঠন এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়নের বিবরণ থাকতে হবে। সংস্থাটিকে FDTL শিথিলতার জন্য প্রয়োজনীয় আবেদনও জমা দিতে বলা হয়েছে।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর আক্রমণ
এই অপারেশনাল বিপর্যয়ের মধ্যেই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। লোকসভার বিরোধী দলনেতা এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ পোস্ট করে বলেন, “ইন্ডিগোর এই fiasco হলো সরকারের ‘একচেটিয়া মডেল’-এর ফল।” তিনি অভিযোগ করেন, “আবারও সাধারণ ভারতীয়রা এর মূল্য দিচ্ছে – দেরিতে, বাতিল হওয়াতে এবং অসহায়তায়।” রাহুল গান্ধী বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘ফেয়ার কম্পিটিশন’ (ন্যায্য প্রতিযোগিতা) দরকার, ‘ম্যাচ ফিক্সিং মনোপলি’ নয়।
শুক্রবারও ইন্ডিগো ৪00-র বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। শুধু দিল্লিতেই বাতিল হয়েছে ২২০-র বেশি ফ্লাইট।



















