ব্যুরো নিউজ, ০৫ই ডিসেম্বর ২০২৫ : অসামরিক বিমান পরিষেবা সংস্থা ইন্ডিগো (IndiGo)-তে পাইলটের অভাবজনিত কারণে দেশজুড়ে ব্যাপক বিমান বাতিলের ঘটনায় হাজার হাজার যাত্রী এই মুহূর্তে চরম দুর্ভোগের শিকার। গত চারদিন ধরে দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলিতে এই পরিষেবা বিপর্যয় চলছে। দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দ্রাবাদের মতো বিমানবন্দরগুলিতে যাত্রীরা দীর্ঘ বিলম্ব, ফ্লাইট বাতিল, লাগেজ হারানো এবং কোনো স্পষ্ট তথ্য না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে বিমানবন্দরগুলির চরম বিশৃঙ্খলা এবং যাত্রীদের অসহায় অবস্থা প্রকট হয়েছে।
স্যানিটারি প্যাডের জন্য বাবার আকুতি: মানবিক মুখ হারানো সঙ্কট
বিমানবন্দরের বিশৃঙ্খলার মধ্যে একটি হৃদয়বিদারক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বিশেষভাবে সাড়া ফেলেছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন অসহায় বাবা তাঁর মেয়ের জন্য স্যানিটারি প্যাডের (sanitary pad) জন্য ইন্ডিগোর কর্মীদের কাছে বারবার কাকুতি-মিনতি করছেন।
বাবাটিকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়: “ও সিস্টার… আমার মেয়ের নিচ থেকে রক্ত আসছে। প্যাড চাই… দিয়ে দাও।”
এতে কর্মীরা অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন করেন, “কেন দিতে পারছো না?”
এই ভিডিওটি দেখে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছেন। এক ‘এক্স’ (X) ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “ইন্ডিগো বিশৃঙ্খলার মধ্যে একজন বাবার মেয়ের জন্য স্যানিটারি প্যাডের আকুতি সত্যিই হৃদয়বিদারক। একজন অভিভাবক হিসেবে সেই হতাশা অনুভব করা যায়। বিমানবন্দরে সামান্যতম মানবিক মর্যাদার জন্য কাউকে ভিক্ষা করতে হওয়া উচিত নয়।” অনেকে আবার এত বড় বিমানবন্দরে একটিও প্যাড মজুত না থাকায় কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
“আমার ফ্লাইট কোথায়?”: ক্ষুব্ধ যাত্রীর রোষ
অন্য একটি ভাইরাল ভিডিওতে চরম ধৈর্যের পরীক্ষায় থাকা এক যাত্রীকে ইন্ডিগো কর্মীদের দিকে চিৎকার করে প্রশ্ন করতে শোনা যায়: “Where is my fu**ing flight?” (আমার ***এর ফ্লাইটটা কোথায়?)
অন্য একজন যাত্রীকে বলতে শোনা যায়, “জবাব দে না (উত্তর দাও)… আমি (ভোর) ৩টে থেকে জিজ্ঞেস করছি।”
এই ঘটনাগুলি ইন্ডিগোর পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কারণে যাত্রীদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অনেক যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে থাকার অভিযোগ করেছেন এবং এ বিষয়ে কর্মীদের কাছ থেকে কোনো সঠিক তথ্য পাননি বলেও জানিয়েছেন।
ইন্ডিগোর ক্ষমা প্রার্থনা ও সিইও’র আশ্বাস
ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইন্ডিগো সামাজিক মাধ্যমে (X) একটি বিবৃতি দিয়ে প্রভাবিত যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। সংস্থাটি বলেছে: “আমাদের প্রত্যেক গ্রাহকের উদ্দেশ্যে—আমরা সত্যিই দুঃখিত এবং আমরা ব্যবস্থা নেবই!”
তারা আরও জানায়, “আমরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং বুঝতে পারছি যে গত কয়েকটা দিন আপনাদের অনেকের জন্য কতটা কঠিন ছিল। যদিও এর সমাধান রাতারাতি হবে না, আমরা আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে এই সময়ের মধ্যে সাহায্য করার জন্য এবং যত দ্রুত সম্ভব আমাদের পরিষেবা স্বাভাবিক করতে আমরা সবরকম চেষ্টা করব।”
ইন্ডিগো সিইও জানিয়েছেন, ১০০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং পরিষেবা স্বাভাবিক হতে ডিসেম্বর ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে সময় লাগতে পারে।
সঙ্কটের মূলে অব্যবস্থা ও ‘জালিয়াতি’?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA)-এর নিয়ম মেনে যাত্রীদের সুরক্ষা এবং বিমান পরিচালনার সতর্কতা বজায় রাখতে গিয়ে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইন্ডিগো এই ব্যর্থতার শিকার। পরিষেবা সংস্থাগুলি বিপুল লাভ করতে গিয়ে অপর্যাপ্ত পাইলট ও কর্মী নিয়োগ করে—যা কর্মীদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে এবং বড় কোনো দুর্ঘটনার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই নিয়ম না মানা সংস্থাগুলির উপর যখন নিয়ম মানার নির্দেশ জারি হয়, তখনই যাত্রীরা এই ধরনের ভোগান্তির শিকার হন। এটিকে অনেকেই সংস্থার পক্ষ থেকে এক ধরনের ‘জালিয়াতি বা দুর্নীতি’ হিসেবে দেখছেন।



















