ব্যুরো নিউজ ১১ জুন : ভারতীয় রেল যাত্রীদের দুশ্চিন্তা কমাতে এবং ভ্রমণের পরিকল্পনা আরও সহজ করতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে। এতদিন পর্যন্ত ট্রেন ছাড়ার মাত্র চার ঘণ্টা আগে চূড়ান্ত যাত্রী চার্ট প্রকাশ করা হত, যা বহু যাত্রীর জন্য শেষ মুহূর্তের অনিশ্চয়তা তৈরি করত। তবে, ‘দ্য পাইওনিয়ার’-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন থেকে নির্ধারিত সময়সূচির ২৪ ঘণ্টা আগেই চূড়ান্ত যাত্রী চার্ট প্রকাশ করার পরিকল্পনা শুরু করেছে ভারতীয় রেলওয়ে। এই নতুন ব্যবস্থা সফল হলে রেলওয়ে বোর্ড কর্তৃক একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।
বিকানের ডিভিশনে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ
এই নতুন পদ্ধতিটি বর্তমানে ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে জোনের বিকানের ডিভিশনে একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ৬ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে এর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা হবে। এই পাইলট প্রকল্পের ইতিবাচক ফলাফলের ভিত্তিতে, প্রকল্পটি দেশের অন্যান্য ডিভিশনগুলিতেও প্রসারিত করা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে, এই ব্যবস্থাটি বিকানের বিভাগে একটি ট্রেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এতে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি বলে জানা গেছে, যা এই পরীক্ষাকে ‘ইতিবাচক ফলাফল’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
যাত্রী স্বস্তি ও উন্নত পরিকল্পনা
রেলওয়ে সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হলো যাত্রীদের, বিশেষ করে যারা দূরবর্তী স্থান থেকে আসছেন, তাঁদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও কার্যকর করতে সাহায্য করা এবং শেষ মুহূর্তের চাপ এড়ানো। এটি অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী হবে, কারণ তাঁরা ট্রেন ছাড়ার একদিন আগেই তাঁদের টিকিটের অবস্থা জানতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী ভ্রমণের বিকল্প ব্যবস্থা বা পরিকল্পনা করার সুযোগ পাবেন।
মধ্যবর্তী স্টেশনগুলিতে সহজ বোর্ডইং
এই পদক্ষেপটি এমন যাত্রীদের জন্যও সহায়ক হবে যারা কিছু প্রিমিয়াম ট্রেনের অফিসিয়াল স্টপ না থাকা সত্ত্বেও মধ্যবর্তী স্টেশন থেকে উঠতে চান। উদাহরণস্বরূপ, আলিগড় থেকে আসা যাত্রীরা, যারা নিউ দিল্লি-কলকাতা রাজধানী এক্সপ্রেসে উঠতে চান কিন্তু আলিগড়ে ট্রেনটি থামে না, তাঁরা এখন দিল্লি বা কানপুর হয়ে তাঁদের যাত্রা আরও ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে পারবেন। এটি যাত্রীদের জন্য আরও নমনীয়তা নিয়ে আসবে।
পর্যালোচনা ও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা
চলমান পাইলট প্রকল্পটি যাত্রী সুবিধার পাশাপাশি সম্ভাব্য অপারেশনাল সুবিধার জন্যও মূল্যায়ন করা হবে। একটি রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে যে, একটি বিস্তারিত মূল্যায়ন চলছে এবং আরও পদক্ষেপের জন্য রেলওয়ে বোর্ডে সুপারিশ জমা দেওয়া হবে। তবে, পাইলট পর্বে টিকিটের বর্তমান উপলব্ধতা এবং স্পট বুকিং ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। রেলওয়ে মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে ২১ মে বিকানের রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তারা এই ধরণের ব্যবস্থার পরামর্শ দেন, যার সঙ্গে তিনি একমত হন এবং এর পরেই এর সঙ্গে সম্পর্কিত পাইলট রান শুরু হয়। এই ব্যবস্থা বিশেষ করে সেইসব রেল রুটে আরও কার্যকর প্রমাণিত হবে, যেখানে বেশি ভিড় থাকে এবং অপেক্ষার তালিকা দীর্ঘ হয়, যেমন দিল্লি, বিহার, বাংলা এবং মুম্বাই রুট।
জালিয়াতি রোধে তৎকাল নিয়মে কড়াকড়ি
পাশাপাশি, রেলওয়ে তৎকাল টিকিট বুকিংয়ের নিয়ম আরও কঠোর করেছে। এখন আইআরসিটিসি (IRCTC) এর মাধ্যমে তৎকাল টিকিট বুকিংয়ের জন্য আধার-ভিত্তিক ই-ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেসব যাত্রীর আইআরসিটিসি অ্যাকাউন্ট আধার-এর সাথে সংযুক্ত থাকবে, তাঁরা তৎকাল বুকিংয়ের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে অগ্রাধিকার পাবেন। এমনকি অনুমোদিত এজেন্টদেরও এই প্রাথমিক সময়ে বুকিং করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এই পদক্ষেপটি দালালদের ঠেকাতে এবং প্রকৃত যাত্রীরা যাতে নিশ্চিত টিকিট পান, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা
বর্তমান চার্টিং ব্যবস্থা
বর্তমানে, প্রথম যাত্রী চার্ট সাধারণত ট্রেন ছাড়ার চার ঘণ্টা আগে (অথবা ভোরবেলার ট্রেনের জন্য আগের রাতে) প্রস্তুত করা হয়। চূড়ান্ত চার্টটি ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগে প্রকাশ করা হয়। এই চূড়ান্ত চার্টে অবিক্রিত কোটা আসনগুলি সাধারণ বা তৎকাল কোটায় পুনরায় বরাদ্দ করা হয় এবং অপেক্ষমাণ তালিকার টিকিটগুলি আরএসি (RAC) বা নিশ্চিত মর্যাদায় উন্নীত হতে পারে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, চার্ট তৈরির পর সম্পূর্ণ নিশ্চিত ই-টিকিট বাতিল করা যায় না, এবং সম্পূর্ণ অপেক্ষমাণ তালিকার ই-টিকিটগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। আরএসি টিকিট বোর্ডইংয়ের জন্য নিশ্চিত হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে প্রযোজ্য পদ্ধতি অনুযায়ী বাতিল না করা পর্যন্ত ফেরত পাওয়ার যোগ্য নয়।