PM Modi express concern over Nepal

ব্যুরো নিউজ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট দেশ নেপাল গত কয়েকদিন ধরে ভয়াবহ গণবিক্ষোভে উত্তাল। তথাকথিত ‘জেন-জি’ প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে, যা পরে দুর্নীতিবিরোধী এক বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নেয়। সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বুধবারও দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং জারি রয়েছে কারফিউ।

ক্ষোভের মুখে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব

বিক্ষোভকারীরা তাদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানী কাঠমান্ডু এবং অন্যান্য শহরে ব্যাপক তাণ্ডব শুরু হয়। উত্তেজিত জনতা পার্লামেন্ট ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন এবং রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝলনাথ খানালের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলে তাঁর স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরের মৃত্যু হয়। অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু প্রসাদ পাউডেলকেও জনতা তাড়া করে বেধড়ক মারধর করে।

Nepal : নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, তীব্র বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা

 

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাঁর মন্ত্রিসভার আরও চারজন সদস্যও পদত্যাগ করেন। তবে এতেও বিক্ষোভ শান্ত না হওয়ায় সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করে। রাত ১০টা থেকে নিরাপত্তা কার্যক্রমের দায়িত্ব নেয় সেনাবাহিনী। নেপালি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল বিক্ষোভকারীদের শান্তি বজায় রাখতে এবং আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি সহিংসতা চলতে থাকলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।

ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা

পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিভিন্ন কারাগারে পালানোর চেষ্টার সময় ব্যাংকো জুভেনাইল রিফর্ম হোমে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে এবং পোখারায় একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ২৭ বলে ধারণা করা হলেও, সরকারিভাবে এখনো এই সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি। কাঠমান্ডু ও পোখরাসহ বিভিন্ন জেলায় জেল ভেঙে বন্দিরা পালিয়েছে এবং অস্ত্রশস্ত্র লুঠ করা হয়েছে।

 

শান্তি ফেরাতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান ও উদ্যোগ

এই সংকট নিরসনে নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল শান্তি ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার তিনি ‘জেন-জি’ বিক্ষোভের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে নাগরিকদের দাবি-দাওয়া আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব।”

Nepal : নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা, দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ১৯ জনের মৃত্যু

ভারতের প্রতিক্রিয়া

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতও নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স (আগের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে নেপালের পরিস্থিতিকে “হৃদয়বিদারক” বলে বর্ণনা করেছেন এবং প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” মোদী নেপালের জনগণকে ক্রোধ ও বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে শান্তি ও ঐক্যের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানান।

সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে যে, বহু রাষ্ট্রে বাম এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের পতনের পর এসেছে চূড়ান্ত অরাজকতা এবং পরবর্তীকালে মৌলবাদী প্রশাসন গঠিত হয়েছে। আফগানিস্তান, সিরিয়া, বাংলাদেশের প্রথম সারির উদাহরণ। ইউক্রেনেও ইউরো ময়দান গণঅভ্যুত্থানের পর জেলেনস্কি প্রশাসন ক্ষমতায় আসে এবং ফলস্বরূপ রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বর্তমান। গত এক সপ্তাহের মধ্যে গোটা বিশ্বে এই নিয়ে তিনজন প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দিলেন, জাপান, ফ্রান্স এবং নেপাল। যদিও সব ঘটনাই পৃথক, তবে বিক্ষোভ, জনরোষ এবং গণমাধ্যম দ্বারা রাজনীতিকে প্রভাবিত করা ২১ শতকের শাসন ব্যবস্থায় ধারাবাহিক হয়ে যাচ্ছে। তবে এতে জড়িত রয়েছে কিছু দুরভিসন্ধি যুক্ত মানুষ, যারা এইরকমের আন্দোলনের মধ্যে শামিল হয়ে, পররাষ্ট্রের দেওয়া নির্দেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করে সেই রাষ্ট্রের সরকারি সম্পত্তি, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো। এর টের বাংলাদেশেও পাওয়া গিয়েছিল, খোদ পশ্চিমবঙ্গেও (১৪ আগস্ট ২০২৪-এর রাতে আরজি কর ভাঙচুর) এবং এখন নেপালেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর