ব্যুরো নিউজ ৫ জুন : নয়াদিল্লিতে শুরু হতে চলেছে দুই দিনব্যাপী ৪র্থ ভারত-মধ্য এশিয়া সংলাপ, যেখানে এই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমন এবং জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অংশীদারিত্ব জোরদার করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই সংলাপে কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এই পাঁচ মধ্য এশীয় বিদেশমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন, যখন আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতা: মূল আলোচ্য বিষয়
এই সংলাপের প্রধান লক্ষ্য হল আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করা। মধ্য এশীয় দেশগুলির সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, যা এখন নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও প্রসারিত হচ্ছে। অতীতেও ভারত এই পাঁচটি দেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সমন্বয় করেছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারদের জন্য ভারত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও আয়োজন করেছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ভারত এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলি একে অপরের ‘বর্ধিত প্রতিবেশী’ হিসেবে সহস্রাব্দ পুরনো সাংস্কৃতিক এবং জনগণ-থেকে-জনগণের আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আধুনিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উপভোগ করে।”
সংলাপের ইতিহাস ও লক্ষ্য
ভারত-মধ্য এশিয়া সংলাপ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সমরকন্দে শুরু হয়েছিল। এটি ভারত এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় বৈঠকটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। তৃতীয় বৈঠকটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ভারত ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য সংযোগের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
৬ই জুনের চতুর্থ সংস্করণে, মন্ত্রীরা ভারত এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য, সংযোগ, প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন সহযোগিতার উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করবেন। তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ এবং পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়েও মতামত বিনিময় করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব এবং ভবিষ্যতের পথ
২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ভারত-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ভারত-মধ্য এশিয়ার সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ সম্মেলনে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। এই শীর্ষ সম্মেলন ‘দিল্লি ঘোষণা’ গ্রহণ করেছিল, যা দ্বি-বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন এবং নিয়মিত মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।
তুর্কমেনিস্তান ব্যতীত চারটি মধ্য এশীয় দেশ সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO), এশিয়া কোঅপারেশন ডায়ালগ (ACD) এবং কনফারেন্স অন ইন্টারঅ্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস ইন এশিয়া (CICA)-এরও সদস্য। এছাড়াও, সমস্ত মধ্য এশীয় দেশগুলি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারকৃত ও প্রসারিত স্থায়ী সদস্যপদ এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলিতে ভারতের প্রার্থীদের সমর্থন করে। এই সংলাপের মাধ্যমে ভারত ও মধ্য এশিয়া উভয়ই সন্ত্রাসবাদের মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

















