ব্যুরো নিউজ ২৮ মে : প্রায় ৩৩ বছর ধরে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করার পর অবশেষে মুম্বাই বিমানবন্দরে আটক হলেন এক বাংলাদেশি মহিলা। মারিয়াখাতুন মোহাম্মদ মনসুর আলী (Maria Khatun Mohammad Mansur Ali) নামে ওই মহিলাকে মঙ্গলবার (২৭ মে, ২০২৫) ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আটক করে। তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে কুয়েতে ছয় বছর ধরে কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে, যা এই ঘটনার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আটকের বিস্তারিত ঘটনা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মারিয়াখাতুন মোহাম্মদ মনসুর আলী ১৯৯২ সালে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। মুম্বাইয়ে আসার পর তিনি অরবিন্দকুমার হীরালাল নামে এক ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি স্বামীর পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিকত্বের দাবি জানাতে জাল নথি তৈরি করেন এবং ২০১৬ সালে একটি ভারতীয় পাসপোর্টও সংগ্রহ করেন। এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি গত ছয় বছর ধরে কুয়েতে কাজ করছিলেন। মঙ্গলবার যখন তিনি মুম্বাই বিমানবন্দরে পৌঁছান, তখন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে তার দীর্ঘদিনের অবৈধ বসবাসের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। সাহার থানার পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, যদি ভারতীয় নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অন্য কেউ সহায়তা করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় পাসপোর্ট বিভাগের পক্ষ থেকেও একটি আলাদা তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
অবৈধ অভিবাসন: একটি গভীর সমস্যা
মারিয়াখাতুন মোহাম্মদ মনসুর আলীর ঘটনাটি ভারতে অবৈধ অভিবাসনের, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসনের একটি বড় চিত্র তুলে ধরে। অর্থনৈতিক কারণ, কাজের সুযোগের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং কখনও কখনও সীমান্ত এলাকার দুর্বল নিয়ন্ত্রণ – বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। একুশ শতকের শুরু থেকেই এই বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
আইনি প্রেক্ষাপট ও শাস্তি
ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় সরকার ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স বিল ২০২৫’ লোকসভায় পেশ করেছে, যা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর শাস্তির বিধান করেছে। নতুন বিলে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের জন্য ৭ বছর পর্যন্ত জেল এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে, বৈধ নথি ছাড়া ভারতে প্রবেশ বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। এই আইনগুলি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলিকে অবৈধ বিদেশিদের চিহ্নিতকরণ, আটক এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা প্রদান করে।
ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া (Deportation Process)
অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের আটক করার পর তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রথমে, আটককৃত ব্যক্তির পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়। যদি তিনি বিদেশি নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত হন, তবে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তার নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয় এবং ভ্রমণের নথি (travel documents) তৈরি করা হয়। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের পরিচয় যাচাইকরণের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, যাতে দ্রুততার সাথে তাদের ফেরত পাঠানো যায়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর, তাদের ‘হোল্ডিং সেন্টার’ বা আটক কেন্দ্রে রাখা হয় এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই প্রক্রিয়াটি আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা এবং আইনি পদক্ষেপের উপর নির্ভরশীল।
মারিয়াখাতুন মোহাম্মদ মনসুর আলীর এই ঘটনা ভারতের অভিবাসন নীতি এবং সীমান্ত সুরক্ষার চ্যালেঞ্জগুলির উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। এই ধরণের ঘটনাগুলি প্রায়শই সীমান্ত সুরক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করে।