ব্যুরো নিউজ ২৭ মে : পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা অব্যাহত। সম্প্রতি নদিয়ার কুলগাছি গ্রামে এক নবজাতক ও ছ’জন মহিলা সহ মোট ১০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে ধানতলা পুলিশ। রানাঘাট পুলিশ জেলার অন্তর্গত এই ঘটনাটি সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত নজরদারি অভিযানের সময় ঘটে বলে জানিয়েছেন সীমান্ত পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট সোমনাথ ঝা।
নদীয়ার কুলগাছিতে ১০ বাংলাদেশি আটক
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত ওই ১০ জন বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টার সময় আটক হয়েছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রায় এক বছর আগে একজন ভারতীয় দালালের সহায়তায় এরা অবৈধভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিলেন এবং তখন থেকেই গুজরাটে বসবাস করছিলেন। ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট সোমনাথ ঝা আরও বলেন, তাঁরা সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ধানতলায় ফিরে এসেছিলেন। সোমবার সকল অভিযুক্তকে রানাঘাট আদালতে হাজির করা হয়েছে এবং বিদেশী আইন (Foreigners Act) সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অবৈধ অনুপ্রবেশ ও গুজরাটে বসবাস
এই ঘটনা আবারও ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের রুট এবং এর সঙ্গে জড়িত চক্রের চিত্র তুলে ধরল। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই বাংলাদেশিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে গুজরাটে, বসবাস করছিল। সম্ভবত জীবিকার সন্ধানেই তারা ভারতে প্রবেশ করেছিল। এরপর বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তারা সীমান্ত সংলগ্ন নদিয়ার ধানতলাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
আইনি পদক্ষেপ ও দালালের খোঁজে তল্লাশি
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ এই অবৈধ অনুপ্রবেশে সহায়তা করার সঙ্গে জড়িত দালাল এবং তার সহযোগীদের খুঁজে বের করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই দালাল চক্রগুলিই মূলত সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশে সাহায্য করে এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যদিওবা সমস্ত দালাল চক্র রাজনৈতিক মদত পুষ্ট এবং সংখ্যালঘু তোষণ রাজনীতির অঙ্গ ।
একই এলাকায় পূর্ববর্তী ঘটনা: উদ্বেগের কারণ
নদিয়ার ধানতলা এলাকায় এই ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। চলতি মাসের ৯ মে, ধানতলা পুলিশ ১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে (যাদের মধ্যে সাতজন নবজাতক ছিল) বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় গ্রেফতার করেছিল। এক মাসের মধ্যে একই এলাকায় দু-দুটি বড় ধরনের গ্রেফতারি এই অঞ্চলের সীমান্ত সুরক্ষা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের রুট হিসাবে এর ব্যবহার নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
দেশজুড়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের চ্যালেঞ্জ ও সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত
শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা সক্রিয়। চলতি মাসেই আহমেদাবাদের চান্দোলা হ্রদে আহমেদাবাদ পৌর কর্পোরেশনের বুলডোজার অভিযান চালায়। যেখানে পুকুর পাড়ের জমিতে তৈরি অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়। ওই অভিযানে হাজারেরও বেশি অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয় এবং পুলিশ ৮৯০ জনকে আটক করে। যাদের মধ্যে প্রায় ১৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি দেশজুড়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং এর ফলে সৃষ্ট সামাজিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলিকে স্পষ্ট করে তোলে।
নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষার প্রশ্ন
নদিয়ার ধানতলার বারবার এই ধরনের ঘটনাগুলি পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের সীমান্ত সুরক্ষার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। নবজাতক এবং মহিলাদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ যাত্রাপথে ব্যবহার করা মানব পাচার সংকটের দিকটিও তুলে ধরে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির জন্য এটি একটি চলমান চ্যালেঞ্জ, যেখানে সীমান্ত নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে ইতিবাচক সমন্বয় আরও জোরদার করা প্রয়োজন।