IAF Chief Air Marshal on Operation Sindoor

শুদ্ধাত্মা মুখার্জি , ১১ আগস্ট ২০২৫ : সাম্প্রতিককালে বেঙ্গালুরুতে এয়ার মার্শাল কাট্রে অ্যানুয়াল লেকচারে ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং-এর বক্তব্য আমার মতো প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি যেভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন, তাতে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই সামরিক অভিযানটি কতটা সুপরিকল্পিত এবং সফল ছিল। তার বক্তব্য শুনে আমার মনে হলো, আমি যেন সেই যুদ্ধের প্রতিটি ধাপের সাক্ষী।

 

বালাকোটের ‘ভূতের’ প্রতিশোধ: সুপরিকল্পিত আক্রমণ

এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং তার বক্তব্যে ২০১৯ সালের বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক-এর একটি দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “বালাকোটে, আমরা ভেতর থেকে কিছুই পাইনি এবং আমাদের নিজেদের লোকেদের এটা বোঝানো একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে আমরা কী অর্জন করেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে ইন্টেলিজেন্স ছিল যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে এবং অনেক সন্ত্রাসী মারা গেছে, কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদের লোকেদের বোঝাতে পারিনি।”
কিন্তু ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ক্ষেত্রে চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, “আমি খুব খুশি যে এবার আমরা বালাকোটের সেই ভূতের যত্ন নিতে পেরেছি এবং বিশ্বকে জানাতে পেরেছি যে আমরা কী অর্জন করেছি।” আমার বিশ্লেষণে ধরা পড়েছে যে, প্রতিবার রাজনৈতিক কারণে ভারতের বহু রাজনৈতিক দল হামলার গোপন তথ্য চেয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে আপস করার ঝুঁকি তৈরি করে। কিন্তু এবার শত্রুপক্ষের লোকজন নিজেরাই তাদের ধ্বংসের পরিমাণ ভিডিওতে তুলে ধরেছে, যা সারা পাকিস্তানে রাতের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ও তাণ্ডবের চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে এসেছে।

Operation Sindoor : ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভাঙল লস্করের মেরুদণ্ড ,সংসদ ও মুম্বাই হামলার মূল অর্থযোগানদাতা আব্দুল আজিজ নিহত

শত্রুপক্ষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি: রুশ এবং স্বদেশি প্রযুক্তির জয়

এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিংয়ের বিশ্লেষণ থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ছিল একটি উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধ, যেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দক্ষতা এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কার্যকারিতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কমপক্ষে পাঁচটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান এবং একটি বড় বিমান, বায়ুযুদ্ধে  ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের দ্বারা পাকিস্তানের অন্তত পাঁচটি ফাইটার নিশ্চিত ধ্বংস করা হয়েছে এবং একটি বড় বিমান, যা হয় একটি ELINT বা একটি AEW&C বিমান হতে পারে, ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে ভূপাতিত করা হয়েছে S400 মারফৎ  — এটিই ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে আঘাত করে রেকর্ড করা সবচেয়ে দূরত্বের শিকার।

১. আকাশপথের বিজয়: চিফ মার্শাল নিশ্চিত করেছেন যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কমপক্ষে পাঁচটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান এবং একটি বড় বিমান ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের অন্তত পাঁচটি ফাইটার নিশ্চিত ধ্বংস করা হয়েছে এবং একটি বড় বিমান, যা হয় একটি ELINT বা একটি AEW&C বিমান হতে পারে, ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে ভূপাতিত করা হয়েছে — এটিই ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে আঘাত করে রেকর্ড করা সবচেয়ে দূরত্বের শিকার।” তিনি S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম-এর ভূয়সী প্রশংসা করে এটিকে ‘গেম-চেঞ্জার’ বলে অভিহিত করেন। তার কথা থেকে এটা পরিষ্কার যে, রাশিয়ার থেকে কেনা এই শক্তিশালী সিস্টেমটি পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলোকে আমাদের আকাশসীমা থেকে দূরে রাখতে সফল হয়েছে।

২. ভূমিতে আঘাত: চিফ মার্শাল আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন:

শাহবাজ জ্যাকোবাবাদ এয়ারফিল্ডে পার্ক করা কিছু F-16 যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে।
মারিদ এবং চাকলালার দুটি কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লাহোর ও ওকারার দুটি সারফেস-টু-এয়ার গাইডেড ওয়েপন (SAGW) সিস্টেম ধ্বংস করা হয়েছে।
সুক্কুর ইউএভি হ্যাঙ্গার, ভুলারি হ্যাঙ্গার এবং জ্যাকোবাবাদ F-16 হ্যাঙ্গারসহ তিনটি হ্যাঙ্গার লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন যে, ইন্টেলিজেন্স থেকে জানা গিয়েছিল যে আক্রমণের সময় জ্যাকোবাবাদ হ্যাঙ্গারে কমপক্ষে একটি AEW&C বিমান এবং রক্ষণাবেক্ষণে থাকা কয়েকটি F-16 ছিল।

বিমান বাহিনীর প্রধানের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, পাকিস্তানের বিমান শিবিরে উপস্থিত অন্তত চারটি F-16 এবং একটি SAAB Erieye AWACS বিমান ভারতীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত স্মার্ট অ্যান্টি এয়ারফিল্ড উইপন (SAAW) এবং ব্রহ্মস ক্ষেপনাস্ত্র দ্বারা নষ্ট হয়ে গেছে। এর উপরান্ত , যুদ্ধ চলাকালীন আরও একটি AWACS SAAB Erieye বিমান ৩০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের আকাশসীমার মধ্যে ভারতের S-400 ক্ষেপনাস্ত্র দ্বারা ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়াও, এই আকাশযুদ্ধে চীনের দেওয়া J-10C এবং JF-17, মার্কিনের F-16-ও ভূপাতিত করা হয়েছে, যাদের সংখ্যা প্রায় ৫। মোট ১০ টি পাকিস্তানি অত্যাধুনিক বিমান ধ্বংসের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে ।  চিফ মার্শাল বলেছেন যে, পাকিস্তানের সারগোধা বিমান ঘাঁটি আক্রমণ করা সমস্ত ভারতীয় বিমানযোদ্ধাদের স্বপ্ন ছিল, যা এবার পূরণ হয়েছে।

রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং কৌশলগত বিশ্লেষণ

এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং তার বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় বাহিনীকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের সংসদীয় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে ধুলিসাৎ করে বিমান বাহিনীর প্রধান বলেন যে, তাদের ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। তারা নিজেদের মতো যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করছিল এবং উচ্চ প্রযুক্তির বায়ুযুদ্ধ পরীক্ষা করছিল। যদি কোনো ধরনের শৃঙ্খলাবদ্ধতা থেকে থাকে, তা ছিল বিমান বাহিনীর নিজেদের। তারা একটি নির্দিষ্ট এস্কেলেটরি প্রণালী অনুসরণ করছিল, ধাপে ধাপে যুদ্ধ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায়।

অপারেশন সিঁদুরে ৮ F-16, ৪ JF-17 ভূপাতিত; বিপুল ক্ষতি পাক বিমান বাহিনীর

বায়ুসেনা প্রধানের বক্তব্যের কৌশলগত বিশ্লেষণ – অপারেশন সিঁদুর কে ফিরে দেখা :

প্রথম পর্যায়: প্রথমে ভারতীয় বিমান বাহিনীর লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি। এর মধ্যে ৭টি সীমান্ত সংলগ্ন এবং ২টি পাকিস্তানের গভীরে ছিল। সীমান্ত পারের ঘাঁটিগুলোতে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের ড্রোন ও রকেট সিস্টেম দ্বারা অভিযান চালায়। পাকিস্তানের গভীরে আঘাত হানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাফায়েল এবং মিরাজ ২০০০। এই আক্রমণ কে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায় পাকিস্তানকে দেওয়া চীনের J10C যুদ্ধবিমান যার অত্যাধুনিক দূরপাল্লার PL15 ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় বিমানগুলিকে লক্ষ করে ধেয়ে আসলেও , শেষমেশ বিফল হয়ে ভারতের ভূখণ্ডে পতিত হয় ।  একটি ভারতীয় রাফায়েলের দ্রুত গতির প্রতিরোধ করার ফলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় এবং সেটি অভিযান শেষ করার আগেই ফিরে আসে।

দ্বিতীয় পর্যায়: এই হামলার প্রভাব পাকিস্তানে টের পাওয়া যায়। পাকিস্তান এই হামলার জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসীদের সমর্থনে, যা এই অভিযানকে দ্বিতীয় দিনে যুদ্ধের আকার দেয়। পাকিস্তানের তরফ থেকে প্রায় ৬০০ ড্রোন উড়ে আসে ভারতের সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর শিবির লক্ষ্য করে। কিন্তু ভারতের আকাশতীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে প্রায় ৬০০ পাকিস্তানি ড্রোন ভূপাতিত করে।

তৃতীয় পর্যায়: তৃতীয় দিনে পাকিস্তান বিপুল পরিমাণে বড় ধরনের আক্রমণ হানে। মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি জে.ডি. ভ্যান্স প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোনে সতর্ক বার্তা প্রদান করেন, জবাবে মোদী বলেন ‘দেখা যাক’। এই রাতে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী F-16 এবং SAAB Erieye ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করে। তারা Hatf এবং Shaheen ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ ৪০০ অস্ত্রবাহী ড্রোন ব্যবহার করে। তাদের লক্ষ্য ছিল দিল্লি, জম্মু, রাজস্থান এবং গুজরাটে সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আক্রমণ করা। সেই দিন রাশিয়া থেকে নেওয়া S-400 ক্ষেপণাস্ত্র বেষ্টনী ভারত ব্যবহার করে এবং মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান ও আকাশতীর্-এর সহযোগিতায় পাকিস্তানকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। S-400, ৩০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের AWACS বিমানটিকে ভূপাতিত করে, যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ দূরত্বে একটি বিমানকে গুলি করে নামানোর অনন্য উদাহরণ।

চতুর্থ পর্যায়: এবার ছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীর জবাবদিহির পালা। ১৫টি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র, এস.ইউ-৩০ এম.কে.আই বিমান থেকে উৎক্ষেপিত SAAW এবং মিরাজ ২০০০ থেকে উৎক্ষেপিত SPICE 2000, কার্যত পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর যুদ্ধ ক্ষমতা শেষ করে দেয়। আঘাতে পাকিস্তানের সমস্ত কৌশলগত বিমান ঘাঁটি, পারমাণবিক কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টার এবং ড্রোন কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই আক্রমণের ফলে নষ্ট হয় ভূমিতে থাকা আরও একটি AWACS বিমান এবং বহু F-16, যার রক্ষণাবেক্ষণ চলছিল কৌশলগত বাঙ্কারে। যার ফলে উক্ত পাকিস্তানের বিমান ঘাটিগুলিতে পাকিস্তানের বায়ুসেনার বৈমানিক সহ নিহত হয় বেশ কিছু বিদেশি সামরিক উপদেষ্টা । এদের মধ্যে মার্কিনী , চীন এবং তুরস্কর সামরিক উপদেষ্টা থাকতে পারে – যারা F16 , J10 , বায়রাক্তার ড্রোন এবং পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভারের রক্ষণাবেক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছিলো  !

এই আক্রমণের ফলে পাকিস্তান কার্যত মার্কিন নির্দেশে ডিজিএমও স্তরে আত্মসমর্পন করে এবং যুদ্ধবিরতি প্রার্থনা করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তা মেনে নেয়, কারণ এই মুহূর্তে ভারতের ইচ্ছাও ছিল না বর্ধিত সংঘাতে জড়ানোর।

 

উপসংহার

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থেকেই মার্কিন রাষ্ট্রপতির ভারতের প্রতি মনোভাবে আসে বিপুল পরিবর্তন এবং প্রকাশ্যে আসে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন। বিপুল ক্ষয়-ক্ষতির ভাগীদার মার্কিন মুলুক এবং রাশিয়ার অস্ত্র এত কার্যকরভাবে ব্যবহার করায় প্রশ্নের মুখে পড়ে মার্কিন যুদ্ধবিমান এবং রাডার প্রযুক্তির কার্যকারিতা, সাথে চীনেরও। চীন এরপর, ভারতের সাথে শান্তি স্থাপনের প্রয়াস বাড়িয়ে দেয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের পূর্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝাই যাচ্ছে যে, ভারত কোনো আন্তর্জাতিক মহাশক্তির কাছে মাথা নত করেনি, উপরন্তু চোখে চোখ রেখে তাদের অস্ত্রের মোকাবিলায় সক্ষম আধুনিক যুদ্ধ কৌশল দ্বারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর