ব্যুরো নিউজ ২৮ মে : হিমালয়ের কোলে অবস্থিত শিখদের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান হেমকুণ্ড সাহেবের যাত্রা গত ২৫ মে থেকে শুরু হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫,০০০ ফুট উচ্চতায় নির্মিত এই গুরুদ্বারটি শিখদের দশম গুরু, গুরু গোবিন্দ সিং-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত। বরফে ঢাকা চূড়া দ্বারা পরিবেষ্টিত এই নয়নাভিরাম গুরুদ্বারটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চতম গুরুদ্বার এবং একটি হিমবাহ হ্রদের পাশেই এর অবস্থান, যা এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।

যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি ও আবহাওয়া
উত্তরাখণ্ডের চার ধামের মতো, হেমকুণ্ড সাহেব দর্শনের জন্যও অনলাইনে নিবন্ধন করা আবশ্যক। যারা এই বছর এই পবিত্র স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা হেমকুণ্ড সাহেব-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন। শীতকালে এই গুরুদ্বারটি সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা থাকে এবং প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে বার্ষিক তীর্থযাত্রার জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে, হেমকুণ্ড সাহেবের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৭°C এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় -২°C। তীর্থযাত্রীদের আবহাওয়া অনুযায়ী নিজেদের যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কোনো সমস্যা না হয়।

একাধিক দেশে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ: এই দেশগুলিতে ভ্রমণ করা কি নিরাপদ?

কীভাবে পৌঁছাবেন হেমকুণ্ড সাহেব
হেমকুণ্ড সাহেবের প্রবেশদ্বার হলো গোবিন্দঘাট, যেখানে সড়কপথে পৌঁছানো যায়। এরপর বাকি পথ পায়ে হেঁটে ট্রেকিং করে যেতে হবে।

  • বিমানপথে: হেমকুণ্ড সাহেবের নিকটতম বিমানবন্দর হলো জলি গ্র্যান্ট বিমানবন্দর। এখান থেকে গোবিন্দঘাটের দূরত্ব প্রায় ২৭৬ কিমি। জলি গ্র্যান্ট থেকে ট্যাক্সি বা বাসে করে গোবিন্দঘাট পৌঁছাতে পারবেন।
  • রেলপথে: যদি রেলপথে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে ট্রেন ধরে হরিদ্বারে পৌঁছাতে পারেন। হরিদ্বার থেকে জোশিমঠ পর্যন্ত উত্তরাখণ্ড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস বা ব্যক্তিগত ট্যাক্সি নিতে পারেন।
  • সড়কপথে: জোশিমঠ থেকে হেমকুণ্ড সাহেবের প্রবেশদ্বার গোবিন্দঘাটের দূরত্ব মাত্র ২৪ কিমি। গোবিন্দঘাট থেকে ৫ কিমি দূরে পুলনা গ্রাম পর্যন্ত যানবাহন পরিষেবা পাওয়া যায়। পুলনা থেকে হেমকুণ্ড পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিমি পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়। এই ট্রেকিং পথে ঘানগারিয়াতে তীর্থযাত্রীরা সাধারণত রাতের বিশ্রামের জন্য থামেন।

নিকটবর্তী আকর্ষণীয় স্থান
হেমকুণ্ড সাহেব যাত্রার পথে এবং আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করে।

  • ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স (Valley of Flowers): এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত। ঘানগারিয়া থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে এর অবস্থান। জুলাই এবং আগস্ট মাসে যখন ফুলেরা পুরোপুরি ফোটে, তখন এই উপত্যকাটি এক রঙিন সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। হেমকুণ্ড সাহেবের তীর্থযাত্রীদের জন্য এই মনোরম উপত্যকায় ট্রেকিং করা একটি সাধারণ অতিরিক্ত আকর্ষণ। এই উপত্যকায় ট্রেকিংও ঘানগারিয়া থেকেই শুরু হয়।

    আগামী মাসেই কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা সূচনা

তীর্থযাত্রীদের জন্য পরামর্শ
হেমকুণ্ড সাহেবের যাত্রা শারীরিক দিক থেকে বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তাই তীর্থযাত্রার আগে পর্যাপ্ত শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী গরম পোশাক, আরামদায়ক জুতো এবং বৃষ্টির সরঞ্জাম সঙ্গে রাখা উচিত। অনলাইনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়ায় যাত্রা শুরুর আগেই সেটি সেরে রাখা ভালো। এই যাত্রা কেবল একটি তীর্থযাত্রা নয়, এটি হিমালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করারও এক অনন্য সুযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর