gov try to Covering up ssc scam

লাবনী চৌধুরী, ২৪ এপ্রিল: নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। গত কয়েক বছর ধরে পথে বসে লাগাতার সুর চড়িয়েছে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। টাকার বিনিময়ে যোগ্যদের বঞ্চিত করে সেই চাকরি লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তাদের এই প্রতিবাদে কার্যত টোলে যায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর সিংহাসন। রাজ-পাট ছেড়ে শেষে তার ঠাই হয় শ্রীঘরে। আর সেই সূত্র ধরেই উঠে আসে একাধিক তথ্য যা কার্যত মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মত!

প্রথমেই গোটা বাংলা আগে যা দেখেনি তেমনী এক দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছে এরাজ্য, আর তা হল টাকার পাহাড়। রাতভোর গুনেও যেই টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করা ছিল কষ্টকর। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিস্ট অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় কারি কারি টাকা। আর সেই ঘটনা কার্যত তাজ্জব বনে যাওয়ার মতই ছিল! আর এরপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযানে উঠে আসে একাধিক তথ্য-সহ বহু যোগসূত্র। আর তাতেই একে একে নাম জড়ায় নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এরপর উঠে আসে সেই সকল তথ্য যা কার্যত অবিশ্বাস্যকর!

একের পর এক হুঁশিয়ারি, তৃণমূল সরকারকে এফোঁড়-ওফোঁড় অমিত শাহর

এজেন্সির হাতে আসে যে, চাকরি দেওয়া হয়েছে মেসেজে। যেখানে একটি ছোট্ট বাচ্চাও জানে যে, পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিলে ফেল নিশ্চিত। সেখানে সাদা খাতা জমা দিয়ে নাকি মিলেছে চাকরি। এছাড়া ওএমআর সিটে কারচুপি তো রয়েছেই। তবে এই সব কারচুপি হত কীভাবে?

গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদের ডিভিশন বেঞ্চে রায় ঘোষণা হল ssc নিয়োগ মামলার। আর সেই রায়ে যেভাবে কারচুপি হয়েছে তা নিয়ে মোট ১৭ টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, খালি ওএমআর সিট জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছে। এদিকে প্যানেলে নাম নেই, তারপরেও খালি ওএমআর সিট জমা দিয়ে মিলেছে চাকরি। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সেই প্যানেলের ভিত্তিতে মিলেছে চাকরি। র‍্যাঙ্ক অত্যন্ত কম থাকা স্বত্বেও ওএমআর সিটে কারচুপি করে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চাকরি। এমন নানান অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় গুলি:

অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি করা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ৫ হাজারের বেশি অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে চাকরি দেওয়া হবে। এরফলে যেই যোগ্য প্রার্থীরা চাকরীর জন্য আন্দোলন করছেন তাদেরও চাকরি দেওয়া যাবে, আবার বেআইনিভাবে যারা চাকরি পেয়েছে তাদেরও চাকরি বহাল থাকবে। আর এই বিষয়টি প্রথম সকলের নজরে আনেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর তিনি শিক্ষাসচিব মনিশ জৈনকে এজলাসে ডেকে পাঠান। শিক্ষাসচিব, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, রাজ্যের আইন দফতর ও ক্যাবিনেটের কথা বলেন। তিনি জানান, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই প্রস্তাব করেন তারপর তা আইন দফতরের সঙ্গে কথা বলে ক্যাবিনেটে আলোচনা হয়। তখনই তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলান যে, বেআইনি চাকরিপ্রার্থীদের বাঁচাতে রাজ্যের ক্যাবিনেট এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কি করে? সরকার কি কখনও একটা বেআইনি পদ্ধতিতে প্রশ্রয় দিতে পারে?

এদিনের কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট জানানো হয়ে যায়, অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি করে চাকরি দেওয়ার যে চেষ্টা করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বেআইনি। ফলে, এর সঙ্গে যুক্তদের এমনকি যে সরকারি আধিকারিকরা রয়েছেন তাদের প্রয়োজনে সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।

খাদ্য দফতরের প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিযোগ, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও সেই প্যানেলের ভিত্তিতে মিলেছে চাকরি। কোনও প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে সেই প্যানেলের ভিত্তিতে আর চাকরি দেওয়া যায় না। কিন্তু এভাবেও চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাই এই অবৈধভাবে চাকরি প্রাপকদের চাকরি বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এমনকি তাদের এত দিনের বেতন ১২ শতাংশ বার্ষিক হারে সুদ সহ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এমনকি এই চাকরি প্রার্থীদের সকলকে প্রয়োজনে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলে জানায় আদালত।

নিয়োগ তদন্তে নেমে সিবিআই আধিকারিকরা গাজিয়াবাদে ওএমআর সিট মূল্যায়ন সংস্থার এক প্রাক্তন আধিকারিক পঙ্কজ বান্সালের বাড়িতে হানা দেয়। আর সেখান থেকে একাধিক তথ্য এমনকি ৩ টে হার্ডডিস্ক মেলে। আর তাতেই ওএমআর সিট সংক্রান্ত নানান তথ্য সিবিআই -এর হাতে আসে। সেই হার্ডডিস্কে প্রায় ৫০ লক্ষ ওএমআর সিটের স্ক্যান কপি মেলে। আর তা থেকেই দেখা যায় যে, এসএসসির সার্ভারে চাকরিপ্রাপকদের যে তথ্য রয়েছে তার সঙ্গে হার্ডডিস্কে মেলা ওএমআর সিটের স্ক্যান কপির বিস্তর ফারাক। স্ক্যান ওএমআর সিটে সাদা খাতা থাকলেও, এসএসসির সার্ভারে সেই সকল  চাকরিপ্রাপকের নম্বর অনেক বেশি। আর হার্ডডিস্ক মেলা সেই সকল তথ্য অকাট্য প্রমান হিসাবে সিবিআই আদালতে পেশ করে। আর এই তথ্য প্রমান গুলি বৈধ এবং এই তথ্য তদন্তের কাজে ব্যবহার করা যাবে বলে জানায় আদালত।

এরপর স্বভাবতই একটা প্রশ্ন আসে তাবে কি সকলের চাকরি যাবে? এক্ষেত্রে ২০১৬ সালের পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিট আবারও মূল্যায়ণ করে যোগ্যদের বেঁছে নিতে হবে বলা জানায় আদালত। এক্ষেত্রে উদ্ধার হওয়া ওএমআর সিটের স্ক্যান কপির ভিত্তিতেই পুনঃমূল্যায়ণ হবে। উদ্ধার হওয়া ওএমআর সিটের স্ক্যান কপি পাবলিশ করতে হবে। এর পাশাপাশি  স্ক্যান কপিতে যে নম্বর রয়েছে তার সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার শতকরা নম্বর যোগ করে নতুন প্যালেন তৈরি করতে হবে। এবার যদি ওএমআর  সিটের নম্বরের ভিত্তিতে দেখা যায়, নতুন কোনও প্রার্থীর নাম ওই প্যানেলে যোগ হয়, তবে যদি এখনও সেই প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা না হয়ে থাকে তবে তার পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আর এই ভাবে নতুন প্যেনেল তৈরি করে যোগ্য দের চাকরি দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হলেও, যদি কোনও চাকরিপ্রাপকের নতুন প্যানেলে নাম থাকে তবে তার চাকরি থাকবে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর