FATF Grey List Pakistan

ব্যুরো নিউজ ১৭ জুন : আর্থিক কার্যক্রম টাস্ক ফোর্স (FATF), বৈশ্বিক অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধকারী সংস্থা, সম্প্রতি এপ্রিল মাসে পাহালগামে ঘটে যাওয়া বর্বর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। FATF স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, এই ধরনের আক্রমণ সন্ত্রাসী সমর্থকদের কাছে অর্থ এবং তহবিল স্থানান্তরের মাধ্যম ছাড়া ঘটতে পারে না। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে FATF সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন মোকাবিলার জন্য দেশগুলি যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার কার্যকারিতার উপর তাদের মনোযোগ আরও বাড়িয়েছে।

পাহালগাম হামলায় FATF-এর উদ্বেগ

২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পাহালগামে যে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছিল, FATF সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং এর তীব্র নিন্দা জানায়। FATF তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বজুড়ে হত্যা করে, পঙ্গু করে এবং ভয় তৈরি করে। FATF ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পাহালগামে ঘটে যাওয়া নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং এর তীব্র নিন্দা জানায়। এটি এবং অন্যান্য সাম্প্রতিক হামলা, সন্ত্রাসী সমর্থকদের মধ্যে অর্থ এবং তহবিল স্থানান্তরের মাধ্যম ছাড়া ঘটতে পারত না।”
এই FATF বিবৃতিটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের প্রতি অবিরাম সমর্থন এবং অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বহুপাক্ষিক তহবিল সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর সূত্র অনুযায়ী, পাকিস্তানের এই ধরনের পদক্ষেপ FATF-এর “ধূসর তালিকা” (Grey List) তে রাখার জন্য যথেষ্ট। ২২ এপ্রিল, পাকিস্তান-প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরা কাশ্মীরের পাহালগামে ২৬ জনকে হত্যা করেছিল। ভারত ধারাবাহিকভাবে অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তান মনোনীত সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে এবং ৭ মে ভারতীয় সামরিক হামলায় নিহত সন্ত্রাসীদের শেষকৃত্যে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি থেকে এটি স্পষ্ট হয়।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

পাকিস্তানের FATF ধূসর তালিকাভুক্তি এবং ভারতের প্রচেষ্টা

২৫ আগস্ট FATF-এর এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (APG) এর পরবর্তী বৈঠক এবং ২০ অক্টোবর FATF প্লেনারি ও ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের আগে, ভারত পাকিস্তানের FATF অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ (CFT) নিয়মাবলী লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি নথি প্রস্তুত করছে। এই নথিটি পাকিস্তানকে FATF-এর ধূসর তালিকায় রাখার জন্য FATF-এর কাছে জমা দেওয়া হবে।

পাকিস্তানের FATF ধূসর তালিকার ইতিহাস:

  • ফেব্রুয়ারী ২০০৮: প্রথমবার FATF-এর মনিটরিং তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
  • জুন ২০১০: তালিকা থেকে সরানো হয়।
  • ফেব্রুয়ারী ২০১২: দ্বিতীয়বার তালিকায় ফিরে আসে।
  • ফেব্রুয়ারী ২০১৫: পুনরায় তালিকা থেকে সরানো হয়।
  • জুন ২০১৮: তৃতীয়বার তালিকায় ফিরে আসে।
  • অক্টোবর ২০২২: তালিকা থেকে সরানো হয়, তবে FATF পাকিস্তানকে AML/CFT ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য APG-এর সাথে কাজ চালিয়ে যেতে বলে।

বর্তমানে, FATF-এর ধূসর তালিকায় ২৪টি দেশ রয়েছে। এই দেশগুলি নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকে এবং তাদের অর্থ পাচার, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং বিস্তার অর্থায়ন মোকাবেলায় কৌশলগত দুর্বলতাগুলি সমাধান করতে হয়। পাকিস্তানের বারবার ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ইতিহাস তার সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন দমনের প্রতি প্রতিশ্রুতির অভাবকেই তুলে ধরে।

কলকাতায় তিরঙ্গা যাত্রা ,বিএসএফ জওয়ান মুক্তি, ভুয়ো খবর দমন, সন্ত্রাসবাদ নিপাতন : মোদীর নেতৃত্বে দেশ সুরক্ষিত দাবি শুভেন্দু অধিকারীর

FATF কিভাবে কাজ করে এবং এর তালিকার প্রভাব

FATF কী?

FATF হল একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা যা অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ করে। এটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর সদর দফতর প্যারিসে অবস্থিত। FATF-এর প্রধান কাজ হল আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থাকে এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের অপব্যবহার থেকে রক্ষা করা।

FATF-এর তালিকা:

FATF মূলত দুটি তালিকা বজায় রাখে:

  1. ধূসর তালিকা (Grey List): এই তালিকায় সেই দেশগুলিকে রাখা হয় যাদের AML/CFT ব্যবস্থায় কৌশলগত দুর্বলতা রয়েছে। এই দেশগুলি FATF-এর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকে এবং তাদের এই দুর্বলতাগুলি দূর করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হয়। ধূসর তালিকাভুক্ত দেশগুলির জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং তাদের আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাই-বাছাইয়ের সম্মুখীন হতে হয়।
  2. কালো তালিকা (Black List): এই তালিকায় সেই দেশগুলিকে রাখা হয় যারা AML/CFT ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য কৌশলগত দুর্বলতা রয়েছে এবং যারা FATF-এর সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে বা তাদের প্রতিশ্রুত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়। কালো তালিকাভুক্ত দেশগুলির সাথে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় এবং তাদের উপর কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এই দেশগুলির অর্থনীতির উপর এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তালিকাভুক্তির প্রভাব:

  • আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন বাধাগ্রস্ত: তালিকাভুক্ত দেশগুলির ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলির সাথে লেনদেনে সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে প্রভাবিত করে।
  • বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস: আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত দেশে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করে, কারণ এতে আর্থিক ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • অর্থনৈতিক প্রভাব: দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মুদ্রার মান হ্রাস পেতে পারে এবং ক্রেডিট রেটিং কমে যেতে পারে।
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে দেশটির সম্পর্কের অবনতি হয়, যা অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।

FATF গত ১০ বছর ধরে দেশগুলিকে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের ঝুঁকি থেকে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করছে – যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, ক্রাউড ফান্ডিং এবং ভার্চুয়াল সম্পদের অপব্যবহার রোধে। পাকিস্তানের বারবার ধূসর তালিকায় থাকা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি তার অব্যাহত সমর্থন, FATF-কে পাকিস্তানকে কালো তালিকায় রাখার জন্য ভারতের দাবির গুরুত্ব বাড়ায়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ দমনে একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর