ব্যুরো নিউজ ০৬ নভেম্বর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গে জাল জন্ম শংসাপত্র ইস্যু করার একটি চক্র রাজ্যজুড়ে কাজ করছে। সম্প্রতি এই চক্রের সূত্র ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার গোসাবা থানার পাঠানখালী গ্রামের নাম সামনে এসেছে, যা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। জানা গিয়েছে, এই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ৪ হাজারেরও বেশি ভুয়ো নথিপত্র পাওয়া গেছে।
- পাসপোর্ট র্যাকেটের যোগ: পুলিশ সূত্রে খবর, রাজ্য জুড়ে যে পাসপোর্ট র্যাকেটের তদন্ত চলছে, তার সূত্র ধরেই এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রায় ৪,০০০ পরিবারের এই পাঠানখালী গ্রাম পঞ্চায়েতটি মাত্র দুই বছরে ৩,৫০০টিরও বেশি জাল জন্ম সনদ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ, যার বেশিরভাগই ভারতীয় পাসপোর্ট জাল করতে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
- গ্রেফতার ও রাজনৈতিক যোগ: মামলার প্রধান অভিযুক্ত গৌতম সর্দার গ্রাম পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী এবং স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস ইউনিটের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। পাসপোর্ট র্যাকেটের চক্রের অন্যতম মাথা হিসেবে গত ৭ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয়।
- ‘জাল সনদের রাজধানী’: গ্রামবাসীরা এই ঘটনায় অত্যন্ত লজ্জিত। তাদের গ্রামকে এখন মানুষ ‘ভারতের জাল জন্ম সনদের রাজধানী’ বলছে। যদিও স্থানীয় শাসক দলের নেতারা অভিযুক্তদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তদন্তকারীদের ধারণা, প্রায় ৪০০টি জাল পাসপোর্ট এই চক্রের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি নাগরিক।
SIR প্রক্রিয়ার শুরুতেই আধার কার্ড উদ্ধার, রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে
রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের (SIR) কাজ শুরু হওয়ার ঠিক পরের দিনই পূর্বস্থলী থেকে শত শত আধার কার্ড বস্তাবন্দী অবস্থায় একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়ায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
- উদ্ধার: লালিতপুরের একটি জলাশয় থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করার সময় স্থানীয় শ্রমিকেরা জলের নিচে তিনটি বড় বস্তা দেখতে পান। মাছের আঘাতে ফেটে যাওয়া একটি বস্তা থেকে কিছু আধার কার্ড বেরিয়ে আসে। উদ্ধার হওয়া কার্ডগুলির বেশিরভাগেই পিলা, হামিদপুর এবং লালিতপুর এলাকার ঠিকানা রয়েছে।
- বিজেপি-র অভিযোগ: স্থানীয় বিজেপি নেতা দেবব্রত মণ্ডল অভিযোগ করেন, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবৈধভাবে সংগ্রহ করা আধার কার্ডগুলি পুকুরে ফেলে দিয়েছে।
- তৃণমূলের দাবি: যদিও পূর্বস্থলী (উত্তর)-এর তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় সেই অভিযোগ খারিজ করে দেন। তাঁর পাল্টা দাবি, কিছু দালাল ৫০০ টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড বিক্রি করছিল। পুলিশি পদক্ষেপের ভয়ে তারাই এই কার্ডগুলো ফেলে দিয়েছে।
পর্যবেক্ষণ:
পশ্চিমবঙ্গে যখন নির্বাচন কমিশনের SIR প্রক্রিয়া চলছে, ঠিক তখনই গোসাবার জাল জন্ম শংসাপত্র কেলেঙ্কারি এবং পুবস্থলীতে বস্তাভর্তি আধার কার্ড উদ্ধারের ঘটনা ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক ও জনমনে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলল। এই দুই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, রাজ্যে ভোটার তালিকা ও নাগরিকত্বের নথি নিয়ে বড় ধরনের ‘অবৈধ চক্র’ সক্রিয় রয়েছে, যা SIR প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।



















