ব্যুরো নিউজ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) দেশজুড়ে একটি বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (Special Intensive Revision বা SIR) পরিচালনা করার সম্ভাবনা নিয়ে আগামী ১০ই সেপ্টেম্বর তাদের রাজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবে বলে কর্মকর্তারা শনিবার জানিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে জ্ঞানেশ কুমারের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যগুলোর মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের (CEO) এটি তৃতীয় বৈঠক।
এই বিশেষ অভিযান চলতি বছরের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে পরিচালিত হতে পারে। উল্লেখ্য, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, অসম, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং পুদুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বিদেশিদের, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের অবৈধ অভিবাসীদের, জন্মস্থান যাচাই করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা নির্ভুল করার জন্য যাচাই করবে।
বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
বর্তমানে, এই SIR অভিযান শুধু বিহারে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে চলতি বছরের শেষের দিকে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বিহারের ভোটার তালিকার জন্য দাবি ও আপত্তি জানানোর ১লা সেপ্টেম্বরের সময়সীমা বাড়াতে অস্বীকার করে। আদালত রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়। শুনানিতে নির্বাচন কমিশন আদালতকে জানায়, ১লা সেপ্টেম্বরের পরেও দাবি ও আপত্তি জমা দেওয়া যাবে এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে পর্যন্ত বৈধ আবেদনগুলো বিবেচনা করা হবে।
আদালত নির্বাচন কমিশনের এই বক্তব্য নথিভুক্ত করে জানায় যে, সময়সীমা বাড়ালে এটি একটি “অন্তহীন প্রক্রিয়া” তৈরি করবে এবং নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সম্পূর্ণ সময়সূচি ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
আধার এবং নতুন নথি-সংক্রান্ত জটিলতা
আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিয়ে বিচারপতি সূর্য কান্ত স্পষ্ট করে জানান, এটি যাচাইকরণের জন্য তালিকাভুক্ত নথিগুলির মধ্যে একটি হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে কঠোরভাবে শুধুমাত্র পরিচয় প্রমাণের জন্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আধারকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় না। যদিও আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগ করেন, নির্বাচন কর্মকর্তারা আধার-সহ জমা দেওয়া আবেদনও খারিজ করছেন। এর জবাবে আদালত পুনরায় জানায়, স্বীকৃত ১১টি নথির মধ্যে আধার অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন এই নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত না হওয়া নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। যারা নতুন ভোটার হতে চান বা রাজ্যের বাইরে থেকে এসেছেন, তাদের জন্য একটি অতিরিক্ত ‘ঘোষণাপত্র’ চালু করা হয়েছে। এই আবেদনকারীদের ঘোষণা করতে হবে যে তারা ১৯৮৭ সালের ১লা জুলাইয়ের আগে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং জন্মতারিখ বা জন্মস্থানের প্রমাণ হিসেবে যেকোনো নথি জমা দিতে হবে। একটি বিকল্প হিসাবে, যারা ১৯৮৭ সালের ১লা জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ২রা ডিসেম্বরের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের পিতামাতার জন্মতারিখ ও স্থানের নথি জমা দিতে হবে।
বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ
বিরোধী দলগুলি বিহারে এই SIR কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বিজেপি এবং তাদের মিত্রদের সাহায্য করার জন্য ভোটারদের তথ্য নিয়ে কারচুপি করছে। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত নথিপত্রের অভাবে কোটি কোটি যোগ্য নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। আরজেডি (RJD) এবং অন্যান্য আবেদনকারীরা ১লা সেপ্টেম্বরের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। তারা অভিযোগ করে যে, দাবি জানানোর জন্য ফর্ম আপলোড করা হচ্ছে না এবং নতুন নাম যোগ করার চেয়ে নাম বাদ দেওয়ার কাজকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের অবস্থান
যদিও নির্বাচন কমিশন এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে যে এই অভিযান শুধু অবৈধ বিদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিচালিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের আশ্বাস রেকর্ড করে এবং জানায় যে, দাবি ও আপত্তির জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি যা অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত। আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের সহায়তা করার জন্য প্যারা-লিগ্যাল স্বেচ্ছাসেবকদেরও নিয়োগ করতে হবে।