ব্যুরো নিউজ ৮ আগস্ট ২০২৫ : নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় কারচুপি এবং বিজেপি-র সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব ফেলার অভিযোগ করার একদিন পর, ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এক কড়া বিবৃতিতে ইসিআই রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে “বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন” বলে আখ্যা দিয়েছে। কমিশন বলেছে, রাহুল গান্ধীকে হয় নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী একটি আনুষ্ঠানিক হলফনামা স্বাক্ষর করতে হবে, অথবা জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। কমিশন আরও বলেছে, “যদি রাহুল গান্ধী তার বক্তব্যে অনড় থাকেন, তাহলে তাকে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। যদি তিনি তা না করেন, তাহলে তার অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ তৈরি হবে।”
‘বিভ্রান্তিকর’ অভিযোগের জন্য ক্ষমার দাবি কমিশনের
নির্বাচন কমিশন আরও জানিয়েছে যে, হলফনামা জমা দিতে ব্যর্থ হলে এটি প্রমাণ হবে যে তার নিজের দাবির ওপর তার আস্থা নেই। সেক্ষেত্রে “অযৌক্তিক উপসংহার” দিয়ে নাগরিকদের বিভ্রান্ত করার জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত। কমিশন জোর দিয়ে বলেছে যে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং শক্তিশালী, এবং এতে কোনো ধরনের কারচুপি বা প্রতারণা রোধ করার জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
Congress vs BJP : ‘ ভোট চুরি ‘ বনাম ‘ মস্তিস্কের চিপ চুরি ‘ , মহারাষ্ট্রের বিগত নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক !
রাহুল গান্ধীর ‘অ্যাটম বোমা’ প্রমাণ
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ করেন, এবং তার অভিযোগের সমর্থনে “প্রমাণ” পেশ করার দাবি করেন। গান্ধী একাধিক উপস্থাপনা দেখান এবং বলেন, কংগ্রেস দল হাতে ধরে ভোটার তালিকা বিশ্লেষণ করে অসংখ্য অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন যে, নকল নাম, ভুল ঠিকানা এবং ভুল ছবি ব্যবহার করে ভুয়ো ভোটার তৈরি করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট উদাহরণের উল্লেখ করে গান্ধী দাবি করেন যে, বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের মহাদেবপুরা বিধানসভা বিভাগে ১,০০,২৫০টি ভোট “চুরি” করা হয়েছে। তার মতে, নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য ব্যবহৃত ফর্ম ৬-এর আবেদনগুলিতে ১৮-২৩ বছর বয়সী ভোটারদের খুব কম নাম ছিল। পরিবর্তে, ৫০ এবং এমনকি ৯০-এর কোঠায় থাকা ব্যক্তিদের নাম সেখানে বেশি ছিল।
মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের সিইও-র চিঠি
রাহুলের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা (সিইও) রাহুল গান্ধীকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, “আপনি যদি এই অভিযোগগুলি সত্যি মনে করেন, তাহলে দয়া করে enclosed Declaration/Oath ( লিখিত দাবি সপথ ) -এ স্বাক্ষর করুন এবং ফিরিয়ে দিন, যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।” একই ধরনের চিঠি কর্ণাটকের সিইও-ও রাহুল গান্ধীকে পাঠিয়েছেন, যেখানে তাকে ভোটার তালিকার অনিয়ম সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে হলফনামায় স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে।
ফড়নবিস এবং খাড়গের প্রতিক্রিয়া
এর আগে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস রাহুলের অভিযোগের কড়া জবাব দিয়ে বলেন, “আমার মনে হয় রাহুল গান্ধীর মস্তিষ্কের চিপ চুরি হয়ে গেছে।” অন্যদিকে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রাহুলের অভিযোগকে সমর্থন করে বলেছেন যে, এখন গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষা করার সময় এসেছে। তিনি আরও বলেন, “যখন একটি রাজনৈতিক দল ইসিআইকে প্রশ্ন করত, তখন তারা সাংবিধানিক মর্যাদা বজায় রেখে উত্তর দিত। কিন্তু এখন কেউ প্রশ্ন করলে, ইসিআই জবাব না দিয়ে শাসক দলের প্রতিনিধির মতো আচরণ করছে এবং পাল্টা অভিযোগ করছে।”