durgapur gangrape stirs political controversy

ব্যুরো নিউজ ১৩ অক্টোবর ২০২৫ : পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি এখন উত্তাল। পুলিশি তদন্তে অগ্রগতি হলেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধী দলগুলির তীব্র আক্রমণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মেয়েকে বাংলায় রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার।

 

তদন্তের অগ্রগতি ও গ্রেপ্তারি

ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা ওই ছাত্রী শুক্রবার রাতে এক বন্ধুর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে খাবার আনতে গিয়েছিলেন, তখনই তিনি দুষ্কৃতীদের আক্রমণের শিকার হন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং সেখানে পুলিশের কাছে তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে।

দুর্গাপুর-আসানসোল টাউনশিপ পুলিশ এই মামলায় মোট তিন জন অভিযুক্তকে (আগের প্রতিবেদনে উল্লেখিত) গ্রেপ্তারের পর, রবিবার রাতে আরও একজন অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়েছে। মোট ধৃতের সংখ্যা এখন চার। প্রথম তিন অভিযুক্তকে স্থানীয় আদালত ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।

Durgapur Gangrape : মেডিকেল ছাত্রী ধর্ষণ কাণ্ডে চতুর্থ ধৃত দুর্গাপুর পুরসভার কর্মী, বিতর্কের কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীদের মন্তব্য।

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক

রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাটিকে ‘হতবাক করার মতো’ বলে নিন্দা জানালেও, ছাত্রীর রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি ঘটনা দেখে স্তম্ভিত, কিন্তু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিরও উচিত তাদের ছাত্রছাত্রীদের, বিশেষত মেয়েদের খেয়াল রাখা। মেয়েদের রাতে (কলেজের) বাইরে যেতে দেওয়া উচিত নয়। তাদের নিজেদেরও নিরাপত্তা দিতে হবে। জায়গাটি জঙ্গলের পাশেই।…”

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “…মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে রাতে মেয়েদের বাড়ির বাইরে যাওয়া ঠিক নয় এবং প্রতিটি মেয়ে-বোনের উচিত নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। ধিক্কার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ধিক্কার। দিল্লি-র মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা সহ একাধিক বিজেপি নেত্রী এই মন্তব্যকে ‘নিন্দনীয়’ এবং ‘রাজনৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নিদর্শন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তবে আলিপুরদুয়ারে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন যে সংবাদমাধ্যম তাঁর মন্তব্যকে “বিকৃত” করেছে। তিনি বলেন, “আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি তার উত্তর দিই, আর তারপর আপনারা সেটা বিকৃত করেন। এই ধরনের রাজনীতি করার চেষ্টা করবেন না।”

 

নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন পরিবার: ওড়িশায় ফেরার আর্তি

মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্যাতিতার বাবা তাঁকে ওড়িশায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। সংবাদসংস্থা এএনআই-কে তিনি বলেন, আমার মেয়ে বেদনায় রয়েছে এবং বিছানায় শুয়ে আছে; সে এখন হাঁটতেও পারছে না। আমি এখানে তার নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। যেকোনো মুহূর্তে তাকে আবার আঘাত করা হতে পারে। তাই আমরা তাকে ওড়িশায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বিশ্বাস চলে গেছে।…

দুর্গাপুরে মেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণ

রাজনৈতিক চাপানউতোর ও পালটা আক্রমণ

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে চরম দোষারোপের পালা চলছে।

  • বিজেপির আক্রমণ: বিজেপি এই ঘটনাকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যর্থতা বলে দাবি করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার পশ্চিমবঙ্গকে “ধর্ষক এবং অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য” বলে আখ্যা দেন। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য আরজি করের ঘটনার উল্লেখ করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান এবং বলেন, যতদিন না জবাবদিহি নিশ্চিত হচ্ছে, ততদিন এ রাজ্যের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল বলেন, অপরাধীরা জানে শাসকদলের নেতারা তাদের রক্ষা করার জন্য আছে, তাই রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। শুভেন্দু অধিকারী তো অভিযুক্তদের দ্রুত ‘খতম’ করার জন্য উত্তরপ্রদেশ মডেল অনুসরণ করার দাবি জানান।
  • তৃণমূলের পালটা: রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বিজেপির আক্রমণের জবাবে বলেন, বিজেপি এই বিষয় নিয়ে অকারণে রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, ওড়িশাতে সম্প্রতি এক কলেজছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, যিনি পরে আত্মাহুতি দেন। তিনি দাবি করেন যে, রাজ্যের পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে এবং নির্যাতিতার পরিবার রাজ্য পুলিশের তদন্তে আস্থা রেখেছে।

    তবে রাজনীতিবিদদের এই দোষারোপের মধ্যেই একটি কঠিন বাস্তবতা সামনে আসছে— পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গোটা দেশে একটি বিরূপ চিত্র তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারা নিযুক্ত। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি নিয়োগ বিতর্কিত, এখানে শাসক দলের অনুগামীদের নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতির চক্র পরিষ্কার। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার অভাব এবং শাসন ক্ষমতায় থাকার দম্ভের কারণেই সাধারণ মানুষের উপর, বিশেষত নারীদের উপর, অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে শাসকদলের অনুগামীদের দ্বারা ।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর