durgapur gangrape accusations

ব্যুরো নিউজ ১৩ অক্টোবর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে ওড়িশার এক মেডিক্যাল ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এই মামলায় চতুর্থ অভিযুক্ত শেখ নাসিরউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই গ্রেপ্তারের ফলে মোট ধৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো চার-এ। এদিকে, এই নক্কারজনক ঘটনা এবং রাজ্যের শাসকদলের দুই শীর্ষ নেত্রীর মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক ও দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে।

 

পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি: চারজন গ্রেপ্তার

আস‍ানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এই ঘটনায় মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। এই পর্যন্ত চারজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।আগে গ্রেপ্তার হওয়া তিন অভিযুক্ত হলেন— অপু বাউরি, শেখ ফিরদৌস এবং শেখ রিয়াজউদ্দিন। তাঁদের গতকাল স্থানীয় আদালতে পেশ করা হলে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রবিবার রাতে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর চতুর্থ অভিযুক্ত শেখ নাসিরউদ্দিনকে হেফাজতে নেওয়া হয়। জানা গেছে, ধৃত নাসিরউদ্দিন দুর্গাপুর পৌর কর্পোরেশনের একজন কর্মচারী। আজ তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হবে। পঞ্চম অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

দুর্গাপুরে মেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণ

ঠিক কী ঘটেছিল?

ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা, একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী গত শুক্রবার রাতে (১০ অক্টোবর) তাঁর এক পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে রাতের খাবার কিনতে গিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময় মোটরসাইকেলে আসা কয়েক জন যুবক তাঁদের উত্যক্ত করতে শুরু করে এবং অশালীন মন্তব্য করে। এরপর যুবকেরা মেয়েটির পুরুষ বন্ধুটিকে তাড়িয়ে দিয়ে ক্যাম্পাসের পিছনে একটি জঙ্গল এলাকায় টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে। অভিযুক্তরা ছাত্রীর মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়। পুরুষ বন্ধুটি পরে কলেজের অন্যান্য বন্ধুদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ফিরে আসেন এবং আহত অবস্থায় ছাত্রীকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

 

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক

এই ঘটনার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। বিতর্কের মূল কারণ হলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য। তিনি এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে বলেন, “রাত সাড়ে ১২টায় তারা (ছাত্রী ও তাঁর বন্ধু) ক্যাম্পাস থেকে কীভাবে বাইরে এলো? কলেজের কি কোনো দায়িত্ব ছিল না? আমি জানি না কেন তাদের এত রাতে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। (যদিও নির্যাতিতার বাবার দাবি, ঘটনাটি রাত সাড়ে ১২টা নয়, রাত ৮টা নাগাদ ঘটেছিল)।

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে “অসংবেদনশীল” আখ্যা দিয়ে বিরোধী বিজেপি তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু মন্তব্য করেন যে, যদি এই ধরনের মন্তব্য কোনো বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী করতেন, তবে গোটা দেশে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হতো। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করার (victim blaming) মুখ্যমন্ত্রীর পুরোনো অভ্যাস’ বলে আক্রমণ করেন এবং অতীতে ঘটে যাওয়া অনুরূপ ঘটনার উদাহরণ টানেন।

RG Kar movement : ‘আমাদের দুর্গা বিসর্জন হয়ে গিয়েছে’: ন্যায় না পাওয়া পর্যন্ত গণ-আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান আরজি কর কাণ্ডে নিহত তরুণীর বাবা-মার

কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

সোমবার দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার আরও এক দফা বিতর্কের জন্ম দেন। তিনি বলেন, “একটি সমাজে এমন এক বা দুটি ঘটনা ঘটবেই; বিশ্বে এমন কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে এটি সত্যিই ঘটে না।”

কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন যে, দুর্গাপুরের ঘটনা প্রমাণ করে পশ্চিমবঙ্গে নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা অমিত মালব্য আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলার উদাহরণ টেনে সতর্ক করেন যে, রাজ্য পুলিশ যেন কোনোভাবেই তদন্তে গাফিলতি না করে এবং অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর