ব্যুরো নিউজ ০৯ জুলাই ২০২৫ : গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা দিলীপ ঘোষ যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে চেনা ভঙ্গিতে ধরা দিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে বিজেপির নবনির্বাচিত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের পর পরই প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, “বিজেপিতেই আছি, বিজেপিতেই কাজ করছি। আমি সবসময়ই সক্রিয়।” একই সাথে তিনি আরও বলেন, “দিলীপ ঘোষের দাম আছে, থাকবে। দাম মার্কেটে যাঁর আছে, তাঁকে নিয়েই জল্পনা হয়।” এরপরই জানা যায়, দিলীপ ঘোষকে দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
শমীক-দিলীপ সাক্ষাৎ: ভুল বোঝাবুঝির অবসান
মঙ্গলবার বিকেলে সল্টলেকের বিজেপির দফতরে যান দিলীপ ঘোষ। সেখানে বর্তমান রাজ্য সভাপতির সঙ্গে দেখা করেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। এই সাক্ষাৎপর্বের পরই বিজেপি পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জল্পনা উড়িয়ে দিলীপ বলেন, “বিজেপিতেই আছি, বিজেপিতেই কাজ করছি। আমি সবসময়ই সক্রিয় আছি।” তিনি আরও জানান, “কাল সন্ধেয় শমীকদার সঙ্গে কথা হয়েছিল। দেখা করতে বলেছিলেন।”
কসবা কাণ্ডে প্রধান বিরোধী দল সরব অনুসন্ধানে এবং প্রতিবাদে !
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতির অভিষেক অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন দিলীপ। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উত্তরবঙ্গ সফর হোক বা অমিত শাহের কলকাতায় কর্মসূচি – কোনো কিছুতেই দেখা যায়নি দিলীপ ঘোষকে। যা ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনা ছড়ায়। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সস্ত্রীক দিলীপের উপস্থিতি ঘিরেই বঙ্গ রাজনীতিতে এই জল্পনা আরও দানা বেঁধেছিল। এরপরই দিলীপের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।
এই আবহে মঙ্গলবার শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দিলীপ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “শুধু আমি নই, সমস্ত পুরনো কর্মীরা আপনার সঙ্গে আছে, আপনার (শমীক) হাত ধরে নবান্ন পৌঁছোবো, আপনার নেতৃত্বে লড়াই করতে রাজি আছি।” বঙ্গ বিজেপির অন্যতম সফল সভাপতি এদিন এ-ও বলেছেন, “রাজ্যের পদাধিকারী নই। তাই সব মিটিংয়ে থাকতে হবে, তার কোনও মানে নেই।”
অন্যদিকে, এদিন দিলীপের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “ক্ষণিকের ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে। এর মানে এমনটা নয়, কেউ দলের বাইরে চলে গিয়েছেন। কাউকে অন্য দলের বলে দাগিয়ে দেবেন না। কাউকে অন্য দলের বলে দূরে রাখবেন না। আমরা সবাই পদ্মফুল।”
‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু সেনা’ কি দিলীপ ঘোষের নতুন রাজনীতি ?
তৃণমূলকে হুঙ্কার এবং দলের সঙ্গে সম্পর্ক
দিলীপ ঘোষ তৃণমূলকে নিশানা করে হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, “বলেছিলাম উনিশে হাফ, একুশে সাফ। একুশে সাফ হয়নি। ছাব্বিশে হবে।” দলের সঙ্গে দূরত্ব নিয়ে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “দূরত্বর প্রশ্নই নেই। বিজেপির অফিস থেকে গাড়ি দিয়েছে। আমি যে সিকিউরিটি পাই তাও দলের তরফেই দেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, “আবেগ দিয়েই পার্টি দাঁড়া করিয়েছি। ১৫০ কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। বাংলার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষের মনে আগুন আছে। নিভতে দেব না।”
দিল্লিতে ডাক: কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও আরএসএস’র সঙ্গে বৈঠক
নয়া রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করার পরেই দিল্লি থেকে ডাক পেয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই ডাক পেয়েই বুধবার (১০ই জুলাই) দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। বিশেষ সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। আগামী ১০ তারিখ দিল্লি যাচ্ছেন শমীক ভট্টাচার্যও। এই দিল্লি যাত্রা দিলীপ ঘোষের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান এবং বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।