detachment that attracts -shiv wisdom

ব্যুরো নিউজ, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ : প্রচলিত ধারণায় আমরা মনে করি ভালোবাসা মানেই নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরা। কিন্তু মহাদেব শিবের জীবন দর্শন আমাদের এক বিপরীতমুখী অথচ পরম সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়। শিবের ‘ল অফ ডিটাচমেন্ট’ বা অনাসক্তি তত্ত্ব আমাদের শেখায় যে, যখন আমরা কোনো কিছুকে জোর করে ধরে রাখা বন্ধ করি, তখনই মহাজগত আমাদের শ্রেষ্ঠ উপহারটি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।

১. আসক্তি ভয় থেকে জন্মায়, প্রেম মুক্তি থেকে

আমরা যখন কাউকে হারানোর ভয়ে আঁকড়ে ধরি, তখন সেখানে প্রেমের চেয়ে নিরাপত্তাহীনতা বেশি কাজ করে। শিবের দর্শন অনুযায়ী, আসক্তি (Attachment) বলে— “আমি তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।” আর অনাসক্তি (Detachment) বলে— “আমি নিজের ভেতর সম্পূর্ণ, এবং আমি তোমাকে আমার জীবনে স্বাগত জানাই।” যখন আপনি নিজের অভাববোধ থেকে মুক্ত হয়ে ‘সম্পূর্ণ’ সত্তা হিসেবে দাঁড়ান, তখন আপনি এমন মানুষদের আকর্ষণ করেন যারা আপনার অভাব পূরণ করতে নয়, বরং আপনার পূর্ণতাকে উদযাপন করতে আসে।

Lord Shiva : গৃহস্থ জীবনে শিবের সান্নিধ্য: মনের শান্তি ফেরাতে ৫টি অব্যর্থ সহজ দৈনন্দিন অভ্যাস

২. শূন্যস্থান তৈরিই হলো প্রাপ্তির প্রথম ধাপ

শিব যখন শ্মশানে ভস্ম মেখে ধ্যানে বসেন, তখন তিনি বাহ্যিক জগতের সমস্ত মায়া বিসর্জন দেন। এই ‘ত্যাগ’ বা ‘ছেড়ে দেওয়া’ হলো মনের ভেতর এক বিশাল শূন্যস্থান তৈরি করা। আধ্যাত্মিক নিয়ম হলো— প্রকৃতি কোনো শূন্যস্থান পছন্দ করে না। আপনি যখন আপনার বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো কোনো বিষাক্ত বা অপ্রয়োজনীয় সম্পর্ককে ছেড়ে দেন, তখন আপনি মহাজগতকে সুযোগ করে দেন সেখানে আরও ভালো কিছু পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

“যে সম্পর্কের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাকে ধরে রাখা মানে নিজের ভবিষ্যৎকে আটকে রাখা।”

৩. শিব ও শক্তি: দুই পূর্ণের মিলন

শিব এবং পার্বতীর মিলন কোনো সাধারণ রোমান্টিক গল্প নয়। শিবের ধ্যান আর পার্বতীর কঠোর তপশ্চর্যা প্রমাণ করে যে, দুজনেই এককভাবে নিজেদের ওপর কাজ করেছেন। তাঁরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না। আধুনিক জীবনেও এই তত্ত্ব সমানভাবে কার্যকর। আপনি যখন নিজের আনন্দ বা স্বীকৃতির জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করা বন্ধ করেন (Detachment), তখনই আপনি আপনার ‘আসল শক্তি’ খুঁজে পান। আর এই আত্মবিশ্বাসী সত্তাই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।

৪. পিছু ধাওয়া বন্ধ করা এবং আকর্ষণ করা (Stop Chasing, Start Attracting)

একটি প্রজাপতিকে ধরতে গেলে সে দূরে পালিয়ে যায়, কিন্তু আপনি যদি শান্ত হয়ে বাগানে বসে থাকেন, সে নিজ থেকেই আপনার কাঁধে এসে বসতে পারে। শিবের অনাসক্তি তত্ত্ব ঠিক এটাই বলে। যখন আপনি মরিয়া হয়ে ভালোবাসা বা মনোযোগের পিছু ছোটেন, তখন আপনি নিজের অবমূল্যায়ন করেন। কিন্তু যখন আপনি নিজের সত্যে স্থির থাকেন (Centering), তখন আপনার স্পন্দন বা ‘ভাইব্রেশন’ বদলে যায়। এই উচ্চতর স্পন্দনই সঠিক মানুষকে আপনার দিকে টেনে আনে।

Lord Shiva : দেবীর পরিবর্তে মানবীর সহিত মহাদেবের সংসার গঠিত হল কেন ?

৫. ছেড়ে দেওয়ার শক্তি: ভয়মুক্ত ভালোবাসা

অনাসক্তির অর্থ এই নয় যে আপনি কাউকে ভালোবাসবেন না। এর অর্থ হলো— আপনি ভালোবাসবেন গভীর ভাবে, কিন্তু সেই ভালোবাসায় কোনো মালিকানাবোধ থাকবে না।

  • আসক্তি বলে: “তুমি আমার মতো করে চলো।”

  • অনাসক্তি বলে: “আমি তোমাকে তোমার মতো করেই ভালোবাসি এবং আমি আমার পথেও অবিচল।”

এই স্বাধীনতা যখন কোনো সম্পর্কে থাকে, তখন সেই বন্ধন অনেক বেশি মজবুত হয়। মানুষ সেই ব্যক্তির কাছেই ফিরে আসতে চায়, যে তাকে খাঁচায় বন্দি করে না।

উপসংহার

শিবের অনাসক্তি তত্ত্ব আমাদের শেখায় যে, জীবনের শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদগুলো বলপ্রয়োগে পাওয়া যায় না, সেগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে। আপনি যখন নিজেকে নিয়ে কাজ শুরু করেন, নিজের মূল্য বুঝতে শেখেন এবং ভয়মুক্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় মায়া ত্যাগ করেন, তখন পৃথিবী আপনাকে এমন সব মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যারা আপনার যোগ্য। মনে রাখবেন, সঠিক মানুষটিকে আপনার পিছু ধাওয়া করতে হবে না; আপনি যখন প্রস্তুত হবেন, তারা আপনার পাশেই এসে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর