ব্যুরো নিউজ ৩ জুন : দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা তাঁর “উন্নত দিল্লি” (Viksit Delhi) গড়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য শক্তি ও নিষ্ঠা চেয়ে সোমবার উত্তরাখণ্ডের পবিত্র কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ ধাম পরিদর্শন করেছেন। কার্যভার গ্রহণের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে এই দুই দিনের আধ্যাত্মিক যাত্রায় দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী।
কেদারনাথ ও বদ্রীনাথের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য:
ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক মানচিত্রে কেদারনাথ ও বদ্রীনাথের গুরুত্ব অপরিসীম। কেদারনাথ, যা ভগবান শিবের অন্যতম পবিত্র জ্যোতির্লিঙ্গ, হিন্দুদের কাছে মোক্ষ লাভের এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত এই মন্দির হিমালয়ের কোলে এক দুর্গম পরিবেশে ভক্তদের মনে অপার শান্তি এনে দেয়। অন্যদিকে, বদ্রীনাথ ধাম ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র, যা চার ধামের অন্তর্ভুক্ত। অলকানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তীর্থযাত্রীরা বিশ্বাস করেন, এই স্থানে পুজো করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি মেলে এবং আত্মিক শান্তি লাভ হয়। এই মন্দিরগুলি কেবল ধর্মীয় স্থানই নয়, এগুলি পর্যটকদের জন্যও এক অসাধারণ গন্তব্য, যেখানে হিমালয়ের মনোরম দৃশ্য এবং প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার সুযোগ মেলে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
মুখ্যমন্ত্রীর আধ্যাত্মিক যাত্রা:
কেদারনাথের পবিত্র মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা মন্দিরের পুরোহিতদের নির্দেশনায় প্রার্থনা করেন এবং ভগবান শিবের চরণে মাথা নত করেন। তিনি জানান, এই স্থানে এসে তিনি অপরিসীম শান্তি ও ঐশ্বরিক শক্তি অনুভব করেছেন। বাবা কেদারনাথের কাছে তিনি সমগ্র ভারতবাসীর উন্নতির পথে চলার জন্য শক্তি ও সংকল্প প্রার্থনা করেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গুপ্তা বলেন, “প্রভুর কৃপাতেই আমাকে দিল্লির সেবা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
কেদারনাথ পরিদর্শনের পর মুখ্যমন্ত্রী বদ্রীনাথ ধামে যান, যেখানে তিনি আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন এবং ভগবান বদ্রীবিশাল-এর আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। এই পবিত্র তীর্থযাত্রা কেবল মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক বিশ্বাসকেই প্রতিফলিত করে না, এটি উত্তরাখণ্ডের ধর্মীয় পর্যটনের গুরুত্বকেও তুলে ধরে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী ও পর্যটক এই মন্দিরগুলি দর্শনে আসেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখে।
“উন্নত দিল্লি” – ভারতের রাজধানী হিসেবে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি:
মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা তাঁর “উন্নত দিল্লি” গড়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে বলেন, “আমার লক্ষ্য দিল্লিকে একটি সমৃদ্ধ, পরিচ্ছন্ন এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলা – যেখানে ঐতিহ্য ও অগ্রগতি হাত ধরাধরি করে চলবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, “উন্নত দিল্লি” ধারণাটি শুধুমাত্র ভৌত পরিকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এমন একটি রাজধানী শহর তৈরির স্বপ্ন, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজনীয় পরিষেবা, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা এবং এমন সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে যা দিল্লিকে সত্যিকার অর্থেই একটি বৈশ্বিক শহরে পরিণত করবে। ভারতের রাজধানী হিসেবে দিল্লির এই উন্নয়ন সমগ্র দেশের জন্য এক মডেল হিসেবে কাজ করবে, যা “বিকশিত ভারত” (Viksit Bharat) এর ধারণাকে আরও শক্তিশালী করবে।
এর আগে রবিবার সকালে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পরিবারের সাথে হরিদ্বারের হর কি পৌড়িতে পবিত্র গঙ্গায় স্নান করেন, যা এই আধ্যাত্মিক যাত্রার সূচনা ছিল। এই পরিদর্শনগুলি একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতার সাক্ষ্য বহন করে, তেমনি অন্যদিকে ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এবং পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনাকে নতুন করে তুলে ধরে।