Tinchuley-Dawaipani tourism

ব্যুরো নিউজ ০৭ জুলাই ২০২৫ : গরমের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে এবং একঘেয়ে দৈনন্দিন জীবন থেকে ছুটি নিতে পাহাড়ের শীতলতা সবসময়ই এক দারুণ আশ্রয়। কিন্তু এবার যদি দার্জিলিং, কালিম্পং বা সিকিমের পরিচিত ভিড় এড়িয়ে একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতার খোঁজ করেন, তবে আপনার জন্য রয়েছে দার্জিলিং বা কালিম্পং সংলগ্ন কিছু অফবিট গন্তব্য। এখানে মেঘ, রোদ, পাখি, জন্তু-জানোয়ার, বৃষ্টি ও হিমেল হাওয়া মিলে তৈরি হয় এক চিরন্তন সতেজ আবহাওয়া। রাত নামলেই প্রয়োজন হয় চাদর-সোয়েটারের উষ্ণতার, আর কিছু জায়গায় বারান্দায় বসেই মেঘ ছোঁয়ার অভিজ্ঞতা পাবেন।

রামধুরা: মেঘের আনাগোনা আর পাখির কলতান

কালিম্পং শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামধুরা, দারাগাঁওয়ের কাছেই এর অবস্থান। কালিম্পংয়ের সাথে বা আলাদা করেও এখানে থাকার পরিকল্পনা করতে পারেন। হোমস্টেতে পৌঁছে বিকেলটা অলসভাবে কাটিয়ে দিতে পারেন বা আশপাশে ঘুরে দেখতে পারেন। পরের দিন সকালে চা খেয়ে ইচ্ছেগাঁওয়ের দিকে কিছুটা ট্রেকিং করতে পারেন, পথে চোখে পড়বে সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশন। যারা একটি দিন থাকতে চান, তারা সারাদিন বসে মেঘের আনাগোনা দেখতে পারেন, ফুলের ও পাখির ছবি তুলতে পারেন। বিকেলে স্থানীয়দের ফুটবল খেলা দেখেও সময় কাটাতে পারেন।

কালিম্পংয়ের লাভায় অভিনব পর্যটন উদ্যোগ: ঘুরতে গেলেই মিলবে স্থানীয় ‘উপহার’


কোলাখাম: নেচার লাভারদের স্বর্গরাজ্য

লাভা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোলাখাম একটি অসাধারণ পাহাড়ি গন্তব্য। এটি নেওড়া-ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের ভিতরে অবস্থিত, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু রাস্তা এবং দুপাশে ঘন জঙ্গল এই জায়গার প্রধান আকর্ষণ। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে বন্য জন্তুর দেখাও মিলতে পারে। হোমস্টের বাইরে অলস বসে থাকার অভিজ্ঞতা নিজেই পয়সা উশুল। কাছেই রয়েছে ছাঙ্গে ওয়াটারফলস, যা প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে এবং সকাল সকাল ঘুরে আসা যায়।


দাওয়াইপানি: নিস্তব্ধতা ও কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি

সিঞ্চল অভয়ারণ্যের মাঝে ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম দাওয়াইপানি। পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের ধারে বসে এক কাপ দার্জিলিং চা, সন্ধ্যায় ক্যাম্প ফায়ার ও বারবিকিউ চিকেন আর মন ভালো করা আড্ডা – এর থেকে আর কী বেশি চাইতে পারেন? ভাগ্য ভালো (বা মন্দ) হলে চিতাবাঘেরও দেখা মিলতে পারে! কিছুটা ওপরে হেঁটে গেলে রেড পান্ডা ব্রিডিং সেন্টার চোখে পড়বে, যদিও সেখানে প্রবেশাধিকার নেই, তবে বাইরে থেকে গাছ‌ে চড়তে দেখা যায়। “এখানে মেঘ গাভীর মতো চড়ে” – এই কথাটি আক্ষরিক অর্থেই সত্যি হয় এখানে। কোলাহলমুক্ত দাওয়াইপানি এক-দু’দিন নিস্তব্ধতা উপভোগ করার জন্য দারুণ জায়গা।

কালিম্পংয়ে ধস ও বিদ্যুতের অভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন


লেপচাজগৎ: প্রকৃতির কোলে রোমান্টিক নিভৃত আশ্রয়

দার্জিলিং থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লেপচাজগৎ হল লেপচা আদিবাসীদের বাসস্থান। পাহাড়, জঙ্গল, পাখি, ঝরনা আর নানা রঙিন ফুলে ঢাকা এই সবুজ স্বর্গরাজ্য মধুচন্দ্রিমার জন্যও আদর্শ। ওক, পাইন, রডোডেনড্রন, ধুপি, গুরাস, চাপ, কাওলা, শাল-এর মতো পাহাড়ি গাছে রাস্তার দু’ধার ছেয়ে আছে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন হাতের কাছে। এখান থেকে মিরিক, ঘুম, মানেভঞ্জন, বাতাসিয়া লুপ, গোপালধারা, সীমানা ভিউ পয়েন্ট বা জোরপোখরীর মতো জায়গাগুলো ঘুরে আসা যায়। সময় না থাকলে ঘুম মনাস্ট্রি ও মিরিক লেক দেখে আসতে পারেন। লামাহাটা, তাকদা, তিনচুলে খুব বেশি দূরে নয়, যা এই ছোট গ্রামটিকে পর্যটন মানচিত্রে ক্রমশ জনপ্রিয় করে তুলছে।


সিটং: কমলালেবুর দেশ ও মেঘের স্বর্গরাজ্য

শীতকালে কমলালেবুর দেশ আর গরমকালে মেঘের স্বর্গরাজ্য হলো সিটং। শিবখোলা, অহলদারা, নামথিং পোখরি থেকে কাছেই সিটং। কার্শিয়াং থেকেও মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। এখানকার হোমস্টেগুলি দারুণ এবং কাঠের তৈরি রুমগুলি অসাধারণ। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সামনে রেখে মেঘ-রোদের লুকোচুরি দেখতে দেখতে, হোমস্টের সুন্দর সাজানো টায়ারের ওপর কাঁচ বসানো টেবিল আর বেতের চেয়ারে বসে কমলালেবু, সান্ধ্যকালীন‌ দার্জিলিং চা আর মোমো খাওয়ার মজাই আলাদা। স্থানীয় লাঞ্চও দারুণ, আগে থেকে জানালে পছন্দ মতো পদ পাওয়া যায়।


উপসংহার:
এই অফবিট গন্তব্যগুলি দার্জিলিং-গ্যাংটক-এর পরিচিত কোলাহল থেকে দূরে এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা দেবে। এখানকার হিমেল হাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নিস্তব্ধতা আপনার ভ্রমণকে অবিস্মরণীয় করে তুলবে। তাই এইবার গরমের ছুটিতে বা অক্টোবরের ছুটিতে যদি পাহাড়ে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা চান, তবে এই গন্তব্যগুলি আপনার তালিকায় রাখতেই পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর