darjeeling summer lake

ব্যুরো নিউজ ১৩ জুন: গরমের ছুটিতে পাহাড় মানেই দার্জিলিং। তবে শুধু টাইগার হিল আর চা-বাগান নয়, দার্জিলিং পাহাড়ে রয়েছে এমন কিছু ঝরনা ও লেক, যেগুলো এখনও অনেকেরই অজানা। যেখানে গেলে প্রকৃতি আপনাকে সত্যিই নতুন প্রাণ দেবে। চলুন, এই গরমে ঘুরে আসি দার্জিলিঙের এমনই কিছু অফবিট লেক ও ঝরনার ঠিকানা থেকে, যেখানে প্রকৃতির স্নিগ্ধ স্পর্শ আপনাকে মুগ্ধ করবে।

১. রক গার্ডেন ও চুন্নু ঝরনা (Rock Garden & Chunnu Waterfall): দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে অবস্থিত এই মনোরম স্থানটি। ১৯৮০-এর দশকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন ব্যাহত হলে, গোর্খা পার্বত্য কাউন্সিলের পর্যটন বিভাগ এই রক গার্ডেন নির্মাণ করে। পাহাড় কেটে তৈরি করা রাস্তা ধরে ঝরনার নিচে বসে থাকতে পারেন আপনি। ফুলে মোড়ানো বাগান, বিভিন্ন উচ্চতায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি বসার স্থান এবং ঝরনার কলকল শব্দ আপনার মন ভরিয়ে দেবে। এখানে একটি ছোট হ্রদও রয়েছে, যা এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। রক গার্ডেন থেকে প্রায় ৩ কিমি নিচে গঙ্গা মায়া পার্কও রয়েছে, যা এটি একটি পরিপূর্ণ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

আগামী মাসেই কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা সূচনা

২. সেঞ্চল লেক (Senchal Lake): টাইগার হিলের কাছেই অবস্থিত এই শান্ত লেকটি দার্জিলিং শহরের জল সরবরাহের একটি প্রধান উৎস। প্রায় ১০-১৫ কিমি দূরে মূল শহর থেকে অবস্থিত এই লেকটি তার নিজস্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সেঞ্চল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির অংশ, যা ভারতের প্রাচীনতম অভয়ারণ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। ৩৯ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যটি হরিণ, বন্য শুয়োর, হিমালয়ান কালো ভাল্লুক এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। পিকনিক বা রোমান্টিক সময় কাটানোর জন্য এই লেকটি আদর্শ।

৩. লামাহাট্টা ঝরনা (Lamahatta Waterfall): দার্জিলিং থেকে প্রায় ২৩ কিমি দূরে লামাহাট্টা ইকো পার্কের পাশে অবস্থিত এই ঝরনাটি একটি অফবিট এবং শান্ত পরিবেশের জন্য পরিচিত। এখানকার আশেপাশে ডেন্ড্রোবিয়াম অর্কিড ফুলের বন দেখা যায়, যা স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। লামাহাট্টা ইকো পার্কে প্রবেশ করতে মাথাপিছু ২০ টাকা প্রবেশমূল্য লাগে। ইকো পার্কের ভেতরে উঁচুতে অবস্থিত একটি পবিত্র হ্রদে ট্রেকিং করে পৌঁছানো যায়, যা প্রায় ৮০০ মিটার চড়াই পথ। এই ট্রেকিংয়ের পথ ঘন পাইনবনে ঘেরা এবং দৃশ্যত অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম।

৪. ভিউ পয়েন্ট সংলগ্ন ঝরনা – টিনচুলে ও তাকদা রুট: টিনচুলে-তাকদা রুট তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এই রুটে অনেক ছোট ছোট ঝরনা চোখে পড়বে। এখানে ট্রেকিং করে ঝরনার ঠান্ডা জলের ছোঁয়া উপভোগ করা যায়। তাকদা দার্জিলিং থেকে প্রায় ২৮ কিমি দূরে অবস্থিত, যেখানে ব্রিটিশ আমলের বাংলোগুলি এখনও ইতিহাসের সাক্ষী। তিনচুলে তাকদা থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে অবস্থিত এবং এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার এক দুর্দান্ত দৃশ্য দেখা যায়। তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর সঙ্গমস্থলও এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, যা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

৫. মিরিক লেক (সুমেন্দু লেক, Mirik): দার্জিলিং থেকে প্রায় ৪৯ কিমি দূরে অবস্থিত মিরিক, আর তার প্রাণ হলো এই সুমেন্দু লেক। ১.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লেকের উপর দিয়ে ইন্দ্রেনি পুল নামে একটি ৮০ মিটার লম্বা খিলানযুক্ত পায়ে হাঁটা সেতু রয়েছে। পাইন গাছ ঘেরা এই লেকের চারদিকে সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা হাঁটার পথ আছে, যেখানে হাঁটতে হাঁটতে সূদূর দিগন্তে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ ভ্রমণার্থীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। লেকের জলে প্যাডেল বোট চালানো এবং টাট্টু ঘোড়ায় চড়া অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

৬. মেনদার লেক (Mehandar Lake): সীমান্তবর্তী এলাকা হলেও প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এই লেকটি এক গুপ্ত রত্ন। এর শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশ পর্যটকদের ভিড় থেকে দূরে এক নির্জনতার স্বাদ দেয়। মেনদার লেক তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কম পরিচিতির জন্য অফবিট গন্তব্য হিসেবে বিশেষ আকর্ষণীয়।

৭. গ্লেনবার্ন টি এস্টেট ঝরনা (Glenburn Waterfalls): গ্লেনবার্ন টি এস্টেটে অবস্থিত এই ঝরনাটি সাধারণত এস্টেটের হোমস্টে বুক করলেই দেখা যায়। রিমোট পাহাড়ে অবস্থিত এই প্রাইভেট ঝরনা হতে পারে আপনার ড্রিম লোকেশন। ১৬০০ একর জুড়ে বিস্তৃত এই এস্টেটটি একটি নদী উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত, যেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশ্রেণীর মন মুগ্ধ করা দৃশ্য দেখা যায়। দুটি তুষারপুষ্ট হিমালয় নদী – রঙ্গিত এবং রুংডং – এই এস্টেটের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এটি একটি বিলাসবহুল ছুটির গন্তব্য হিসাবেও পরিচিত।

প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা

দার্জিলিং পৌঁছানোর উপায় (পশ্চিমবঙ্গ থেকে):

বিমানে:

  • সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হল বাগডোগরা বিমানবন্দর (IXB)-এ উড়ে যাওয়া। কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (CCU) থেকে বাগডোগরা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করে।
  • ফ্লাইটের সময়কাল প্রায় ১ ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট
  • বাগডোগরা থেকে আপনি একটি ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন বা দার্জিলিংয়ের জন্য একটি প্রিপেইড ট্যাক্সি নিতে পারেন। এই যাত্রায় প্রায় ২-৩ ঘন্টা সময় লাগে।
  • বিকল্পভাবে, আপনি শিলিগুড়ি (বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ১২ কিমি) পর্যন্ত ট্যাক্সি নিয়ে তারপর দার্জিলিংয়ের জন্য বাস বা শেয়ার্ড জিপ নিতে পারেন। এতে বেশি সময় লাগবে।

ট্রেনে:

  • দার্জিলিংয়ের নিকটতম প্রধান রেলওয়ে স্টেশন হল নিউ জলপাইগুড়ি (NJP)
  • কলকাতা থেকে NJP পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে। যাত্রায় প্রায় ১০-১২ ঘন্টা সময় লাগে।
  • NJP থেকে আপনি ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন, বাস নিতে পারেন, অথবা দার্জিলিং পৌঁছানোর জন্য দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (টয় ট্রেন) নিতে পারেন। টয় ট্রেনটি একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং একটি মনোরম রুট প্রদান করে, তবে এতে বেশি সময় লাগে (প্রায় ৭ ঘন্টা)।

ভ্রমণ টিপস:

  • এপ্রিল থেকে জুন মাস দার্জিলিং ভ্রমণের আদর্শ সময়।
  • সকালে টাইগার হিল এবং বিকেলে লেক/ঝরনা পরিদর্শনের পরিকল্পনা করুন।
  • ট্যাক্সি এবং হোমস্টে আগেই বুক করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
  • ক্যামেরা এবং সানস্ক্রিন নিতে ভুলবেন না, কারণ দিনের বেলায় সূর্যের আলো বেশ তীব্র হতে পারে।

এই গরমে দার্জিলিঙের এই লুকানো রত্নগুলি আপনাকে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা দিতে পারে, যা আপনার মন ও শরীরকে নতুন সজীবতা দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর