ব্যুরো নিউজ ৫ আগস্ট ২০২৫ : দিল্লির লোদী কলোনি থানার এক পুলিশ আধিকারিকের একটি চিঠিতে ‘বাংলাদেশ সরকারের দাপ্তরিক ভাষা’ উল্লেখ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, এই ইস্যুতে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছে বামদলগুলিও, যা রাজ্যে এক বিরল রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি করেছে। তবে পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটে বঙ্গ বিজেপি অভিযোগ তুলেছে যে, ভোটব্যাঙ্কের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়টি নিয়ে অপব্যাখ্যা করছেন।
অনুপ্রবেশকারী ‘বাঙালি’দের পক্ষে তৃণমূল ও বামেদের তীব্র প্রতিবাদ
তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, দিল্লির লোধি কলোনি থানার অফিসার অমিত দত্ত পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গভবনের ওসি-কে পাঠানো চিঠিতে এই মন্তব্য করেছেন, যা বিশ্বের ২৫ কোটিরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা এবং ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার একটির প্রতি চরম অপমান। তৃণমূলের মতে, এটি কেবলই অপমান নয়, বরং বাংলা ভাষার ভারতীয় পরিচয় মুছে ফেলার একটি চেষ্টা।
এই ইস্যুতে তৃণমূলের বিরোধিতার অবসান ঘটিয়ে সুর মিলিয়ে, অনুপ্রবেশকারী ‘বাঙালি’দের পক্ষে নেমেছে বামদলগুলিও। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন, “‘বাংলাদেশী ভাষা’টা কী? সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত ভাষাগুলিও কি দিল্লি পুলিশ জানে না? ওই অফিসার কি নিরক্ষর, নাকি ওএমআর জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছেন?” সেলিমের অভিযোগ, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদের নামে দেশের বৈচিত্র অস্বীকার করে অভিন্ন সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চাইছে, যা আরএসএস-এর বহুত্ববিরোধী চিন্তাধারার প্রতিফলন। যদিও কমরেড সেলিম এখনো হারাম না খেয়ে তার হালালের প্রতি সমর্থনে , তার ধর্মনিরপেক্ষতার দ্বিচারিতা জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। এনার বিপরীতে কমরেড বিকাশ প্রকাশ্যে গোমাংস ভক্ষণ করে তার ‘সেকুলার ব্রাহ্মণ আইনজীবী’ তথা ‘ সাচ্চা কমরেড ‘ হওয়ার পরিচয় দিয়েছেন।
বিজেপির পাল্টা আক্রমণ ও অগ্নিমিত্রার অভিযোগ
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটেছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশিদের রক্ষা করতে চাইছেন এবং সেইজন্যই তিনি বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের বিষয়টাকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “পার্থক্য আছে। যেমন আমি একজন বাঙালি। আর আমি পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করি। তবে বাংলাদেশে আলাদা বাংলা বলা হয়। তাঁরা যে ভাষায় কথা বলেন সেটা আমি বুঝি না। এমনকী বাংলাদেশেও আলাদা আলাদা ভাবে বলা হয়। যেমন সিলেট, রংপুর, রাজশাহির মানুষ একে অপরের থেকে আলাদা ধরনে কথা বলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জানেন। তাও তিনি অপব্যাখ্যা করছেন।”
তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অপব্যাখ্যার কারণ হলো ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। বিহারে এসআইআর হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে তা যেন না হয় সেজন্য চেষ্টা করছেন। অগ্নিমিত্রা মমতাকে প্রশ্ন করেন, “যখন ২৬ হাজার বাঙালি শিক্ষক চাকরি হারালেন তখন আপনার বাঙালি অনুভূতি কোথায় ছিল? ২২ লক্ষ লোক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন রাজ্যে কাজ করছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে বা রাজ্যে কাজের ব্যবস্থা নিতে সরকার কী পদক্ষেপ করছে?”
শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য
এদিকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেছেন, “বাংলাদেশি ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আলাদা। বই পড়লেই বোঝা যায়।” তাঁর মতে, কেবল বাংলা ভাষায় কথা বললেই সবাই ভারতীয় হয়ে যাবে, এমন ধারণা ভুল, কারণ অনেকেই ভুয়া নথি নিয়ে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রবেশ করছে।