ব্যুরো নিউজ ১৮ জুন : আহা রে! আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমন চমৎকার বিভাজন রেখা সিপিএম ছাড়া আর কে টানতে পারে? মঙ্গলবার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) তাদের পলিটব্যুরোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান-সম্পর্কিত “যুদ্ধং দেহি” মনোভাবের তীব্র নিন্দা করেছে। তাদের মতে, এই ধরনের বাগাড়ম্বর মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু ভারতের উপর যখন জঙ্গি হামলা হয়, কিংবা ইসরায়েলের নিরীহ মানুষ যখন সন্ত্রাসবাদীদের নিশানায় পড়ে, তখন এই পার্টি কোথায় থাকে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল বাড়ছে।
সিপিএমের ‘কৌশলী নীরবতা’: যখন ভারত কাঁদে, ওরা নীরব থাকে!
দেশের ভেতরে যখন সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালায়, মুম্বাই থেকে পুলওয়ামা পর্যন্ত রক্ত ঝরে, তখন সিপিএমের ‘কৌশলী নীরবতা’ এক রাজনৈতিক শিল্পকলার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সন্ত্রাসীদের নৃশংসতায় শত শত ভারতীয় প্রাণ হারালে এই বামপন্থী দলটিকে মানবাধিকারের কথা বলতে বা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানাতে খুব একটা দেখা যায় না। বরং, সেই সময় তারা ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র’ অথবা ‘পুঁজিবাদের ব্যর্থতা’ নিয়ে দার্শনিক আলোচনায় মগ্ন থাকে। দেশপ্রেম তখন যেন তাদের এজেন্ডা থেকে উধাও হয়ে যায়!
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ইসরায়েলের ক্ষেত্রে ‘নির্বাচনী’ নিন্দা: চোখ বুজে থাকা এক শিল্প!
ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও সিপিএমের একই ধরনের ‘নির্বাচনী নিন্দা’ দেখা যায়। যখন ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসরায়েলের উপর রকেট হামলা চালায় বা নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের অপহরণ করে, তখন সিপিএমের মুখে কুলুপ আঁটা থাকে। ইসরায়েল যখন আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা পদক্ষেপ নেয়, তখন হঠাৎ করেই সিপিএমের মানবাধিকারের প্রতি প্রেম উথলে ওঠে। তারা ইসরায়েলকে ‘আগ্রাসী’ এবং ‘মানবতার শত্রু’ বলে দেদারসে দোষারোপ করতে শুরু করে। তাদের এই ‘চোখ বুজে থাকা’র শিল্প দেখলে মনে হয়, যেন শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু একটি নির্দিষ্ট দেশেরই!
ইরান কেন সিপিএমের ‘প্রিয়পাত্র’? রহস্যের খাসমহল!
কিন্তু যখন ইরান প্রসঙ্গে আসে, তখন সিপিএমের ‘বৈশ্বিক বিবেকের’ ঘুম ভেঙে যায়! ট্রাম্প যখন ইরানের নেতাদের হত্যার হুমকি দেন বা শর্তহীন আত্মসমর্পণের দাবি করেন, তখন সিপিএমের পলিটব্যুরো তৎক্ষণাৎ একটি বিবৃতি জারি করে। তাদের দাবি, G-7 ইরানকে দোষারোপ করছে, কিন্তু ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের দিকে চোখ বুজে আছে – এ নাকি নিন্দনীয়! যদিও বা ইরানের কমরেডগণ খোমেইনি নেতৃত্বাধীন মৌলবাদী সাম্রাজ্যের পতন চান !!! এইক্ষেত্রে ‘দুনিয়ার মজদুর’ এক হয়ে উঠতে পারলেন না !!!
প্রশ্ন জাগে, ভারত ও ইসরায়েলের উপর সন্ত্রাসী হামলায় নীরব থাকা সিপিএমের ইরান-প্রীতি এতটা কেন? এটি কি আন্তর্জাতিক ‘বামপন্থী স্বৈরাচারী ভ্রাতৃত্ব’-এর ফল? নাকি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী তকমা বজায় রাখতে তাদের এই ‘যুদ্ধং দেহি’ কমিউনিস্টসুলভ রণংদেহি মূর্তি? আসলে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘সঠিক পক্ষ’ বেছে নেওয়ার এই কৌশল বামপন্থীদের বহু পুরনো। যেখানে সাম্রাজ্যবাদ বা পুঁজিবাদকে দায়ী করা যায়, সেখানে তারা এক পায়ে খাড়া! বাকি সময়টা যেন তাদের কাছে ‘অসংগঠিত’ বা ‘ব্যক্তিগত’ সন্ত্রাসবাদ!
বিজেপি সরকারের প্রতি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আবেদন: আগে ঘর সামলান!
সিপিএম বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারকে তাদের “মার্কিন-পন্থী, ইসরায়েল-পন্থী পররাষ্ট্রনীতি পরিত্যাগ” করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, “গ্লোবাল সাউথের প্রতি প্রকৃত প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং এর প্রধান সমর্থক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের অবিলম্বে অবসানের দাবিতে অন্যান্য দেশগুলির সাথে সংহতি প্রকাশ করা উচিত।”
যদিও এই ‘মহান’ উপদেশ দেওয়ার আগে সিপিএম যদি একবার নিজেদের দেশের ভেতরের সন্ত্রাসবাদের দিকেও একটু মনোযোগ দিত, তাহলে হয়তো জনগণ তাদের এই ‘আন্তর্জাতিক প্রেম’কে আরও গুরুত্ব দিত। আপাতত, সিপিএমের এই দ্বিমুখী নীতি দেখে মনে হচ্ছে, তাদের কাছে বিশ্বশান্তি যেন এক বিশেষ ধরনের ‘সিল্ক-স্ক্যানড’ পোশাকে মোড়া, যা নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতির জন্যই তৈরি!