ব্যুরো নিউজ ২ জুন  : দেশের করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা আবারও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ২০৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ৪ জন সহ মোট ৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৬১। এই পুনরুত্থান দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


দেশজুড়ে কোভিড-১৯ এর পুনরুত্থান

সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ভারতজুড়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যায় ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের মধ্যে দিল্লি, কেরল, তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা রয়েছেন। একদিনে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে কেরলে। এর পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে নতুন করে ৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভাইরাসটি ( সংক্রমণকারি জীবাণু ) আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে এবং জনগণের মধ্যে সতর্কতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

  • পূর্ববর্তী পরিস্থিতি: গত কয়েক মাস ধরে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী থাকায় জনসাধারণের মধ্যে কোভিড বিধি পালনে শিথিলতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্যগুলি এই শিথিলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
  • সর্বশেষ তথ্য: এর আগে একদিনে ৬৮৫ জন আক্রান্ত এবং ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল, যা বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে।

    একাধিক দেশে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ: এই দেশগুলিতে ভ্রমণ করা কি নিরাপদ?


রাজ্যভিত্তিক সক্রিয় রোগীর সংখ্যা

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অ্যাক্টিভ কেস রয়েছে কেরলে, যার সংখ্যা ১৪৩৫। এরপরই মহারাষ্ট্রে ৫০৬ জন এবং দিল্লিতে ৪৮৩ জন সক্রিয় রোগী রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৩১, যা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। রাজ্যভিত্তিক সক্রিয় রোগীর তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

  • অন্ধ্রপ্রদেশ: ৩০
  • দিল্লি: ৪৮৩
  • গোয়া: ১০
  • গুজরাত: ৩৩৮
  • হরিয়ানা: ২৮
  • কর্নাটক: ২৫৩
  • কেরল: ১৪৩৫
  • মধ্যপ্রদেশ: ২৩
  • মহারাষ্ট্র: ৫০৬
  • পুদুচেরি: ৩৮
  • রাজস্থান: ৬৯
  • তামিলনাড়ু: ১৮৯
  • উত্তরপ্রদেশ: ১৫৭
  • পশ্চিমবঙ্গ: ৩৩১

ভাইরাসের নতুন ধরন ও উপসর্গ

ICMR-এর প্রধান ডা. রাজীব বহল জানিয়েছেন, পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতে কোভিড আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে। আক্রান্তদের শরীরে ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট JN.1 পাওয়া গেছে।

  • JN.1 ভ্যারিয়েন্ট: এই ভ্যারিয়েন্টটি ওমিক্রনেরই একটি রূপ। এটি অত্যন্ত সংক্রামক হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মারাত্মক নয়। শুধুমাত্র মারাত্মক কোমর্বিডিটি (যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কিডনিজনিত অসুখ) রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রেই এটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাকি সাধারণ মানুষের কাছে এটি একটি সাধারণ ভাইরাল ইনফেকশনের মতোই।
  • সাধারণ উপসর্গ: জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথাই এই কোভিডের মূল উপসর্গ। চিকিৎসকরা এই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত আইসোলেট হয়ে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
  • সতর্কীকরণ চিহ্ন (Warning Signs): শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, ডায়রিয়া, এবং পেটের যন্ত্রণাকে সঙ্কটপ্রবণ উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

    এশিয়ায় কোভিড বৃদ্ধি: কারণ ও নতুন উপসর্গ জানালেন চিকিৎসকরা


করণীয় ও সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা পুনরায় কোভিড বিধি পালনের ওপর জোর দিচ্ছেন। সংক্রমণ ঠেকাতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মেনে চলা আবশ্যক:

  • মাস্কের ব্যবহার: ভিড় এড়িয়ে চলুন এবং বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • হাতের পরিছন্নতা: নিয়মিত সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
  • সামাজিক দূরত্ব: জনসমাগম এড়িয়ে চলুন এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
  • পরীক্ষা ও আইসোলেশন: উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করান এবং রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকুন।
  • টিকা গ্রহণ: যারা এখনও টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বুস্টার ডোজ গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও JN.1 ভ্যারিয়েন্টকে কম গুরুতর বলে মনে করা হচ্ছে, তবুও দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং কোমর্বিডিটিযুক্ত রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই সার্বিকভাবে সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর