ব্যুরো নিউজ ১৪ অক্টোবর ২০২৫ : দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব, তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং পুত্র তেজস্বী যাদব-এর বিরুদ্ধে আইআরসিটিসি (IRCTC) দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে এই রায় লালু পরিবারের জন্য একটি বড় আইনি ধাক্কা।
বিশেষ বিচারক (PC Act) বিশাল গোগনের আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে যে লালু প্রসাদ যাদব একজন সরকারি কর্মচারী হিসাবে “ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন” এবং “নিজের পদের অপব্যবহার” করেছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী:
- লালু প্রসাদ যাদব: সরকারি কর্মচারীর দ্বারা ফৌজদারি অসদাচরণ এবং প্রতারণা করার জন্য ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
- রাবড়ি দেবী ও তেজস্বী যাদব: প্রতারণা এবং প্রতারণা করার জন্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
অভিযুক্ত সকলকেই অভিযুক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে বলে আদালত মনে করেছে। যদিও অভিযুক্তরা সকলেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন, ফলে মামলাটি বিচারের জন্য উঠবে।
সিবিআই-এর অভিযোগ ও দুর্নীতির স্বরূপ
সিবিআই (CBI) দ্বারা তদন্ত করা এই মামলাটি রেলের দুটি হোটেল – বিএনআর রাঁচি এবং বিএনআর পুরী-এর রক্ষণাবেক্ষণের কাজের চুক্তি বরাদ্দে কথিত দুর্নীতি সংক্রান্ত। সিবিআই-এর অভিযোগ, লালু প্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রী থাকাকালীন (২০০৪ থেকে ২০০৯) নিয়ম বহির্ভূতভাবে সুজাতা হোটেল নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে (যাদের মালিক বিজয় ও বিনয় কোচার) চুক্তিটি পাইয়ে দেন।
চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে যে, এই চুক্তির বিনিময়ে লালু যাদব একটি বেনামি সংস্থার মাধ্যমে পাটনায় প্রায় তিন একর গুরুত্বপূর্ণ জমি লাভ করেন।
ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ
আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ৭৭ বছর বয়সী আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে রেলমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পদের অপব্যবহার করে দরপত্রের (টেন্ডার) প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, তিনি দরপত্রের যোগ্যতার শর্তগুলি পরিবর্তন করেন এবং কোচার পরিবারের কাছ থেকে কম দামে জমি কেনার ষড়যন্ত্র করেন।
আদালত বলেছে: “তিনি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এবং একজন সরকারি কর্মচারী হিসাবে তাঁর পদের অপব্যবহার করেছেন। লালু যাদব দরপত্রকে প্রভাবিত করেছেন; দরপত্রের যোগ্যতার শর্তগুলি ম্যানিপুলেট করা হয়েছিল। তিনি কোচারদের কাছ থেকে কম মূল্যে জমি কেনার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।” আদালত আরও জানায় যে, এই জমির কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাবড়ি দেবী ও তেজস্বী যাদবের কাছে স্থানান্তরিত করার জন্য লালু অন্যান্য অভিযুক্তদের সাথে ষড়যন্ত্র করেন।
কম দামে এই জমিগুলির মূল্যায়ন এবং পরবর্তীতে রাবড়ি দেবী ও তেজস্বী যাদবের কাছে শেয়ার স্থানান্তরের বিষয়টি গুরুতর উদ্বেগের কারণ বলে আদালত উল্লেখ করে এবং এর ফলে সরকারি কোষাগারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক চাপান-উতোর
বিহার নির্বাচনের আগে এই ঘটনা আরজেডি-র জন্য বড় ধাক্কা। বিজেপি এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে লালু পরিবারের বিরুদ্ধে “বিহারের দরিদ্রদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা” করার অভিযোগ তুলেছে এবং নির্বাচনী জবাবের অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস এই অভিযোগকে “নির্বাচন-পূর্ববর্তী বিজেপি ষড়যন্ত্র” হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। লালু যাদব ইতিমধ্যেই অন্য একটি ‘জমি-বিনিময়ে চাকরি’ দুর্নীতির মামলায় (Land-for-Jobs scandal) বিচারাধীন রয়েছেন, ফলে এই নতুন অভিযোগগুলি আরজেডি-র নির্বাচনী প্রচারণাকে প্রভাবিত করতে পারে।



















