ব্যুরো নিউজ ৩০ জুন: রাজস্থানের জয়পুরের দাদুদয়াল নগরের একটি ফ্ল্যাটে এক ব্যাংক ম্যানেজার (৪০) এবং তাঁর স্ত্রী (৩৬) রহস্যজনকভাবে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন। শুক্রবার সকালে তাদের ফ্ল্যাট থেকে দেহ দুটি উদ্ধার করা হয় । এর ঠিক আগের দিন সিসিটিভি ফুটেজে তাদের অ্যাপার্টমেন্টের পার্কিং লটে ঝগড়া করতে দেখা গিয়েছিল যার সম্ভবত পরিণতি এই মর্মান্তিক ঘটনা । পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে অনুমান করলেও, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে, যার মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য হত্যার সম্ভাবনাও।
শেষ মুহূর্তের দৃশ্য
মৃত ধর্মেন্দ্র চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রী সুমনের শেষবার বৃহস্পতিবার রাত ১০:৫৬ মিনিটে একসঙ্গে তাদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল। এর কয়েক ঘণ্টা আগে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা একটি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে লিপ্ত। সুমন যেন ধর্মেন্দ্রকে তার গাড়ি নিয়ে চলে যেতে বাধা দিচ্ছিলেন, এরপরই আবেগপ্রবণ হয়ে স্বামীর কাঁধে মাথা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে, অন্য একটি সিসিটিভি ক্লিপে নাকি দেখা যায় যে, ধর্মেন্দ্র ঝগড়ার সময় সুমনকে ধাক্কা দিচ্ছেন। খুবই দুঃখজনক এই ঘটনাক্রম ।
পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে গোয়ায় খুন যুবতি ! প্রণয়ের পরিণতি ?
দেহের অবস্থা ও পুলিশের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধর্মেন্দ্রকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, আর সুমনের নিথর দেহ পড়েছিল মেঝেতে। ফ্ল্যাটে জোর করে প্রবেশের কোনো চিহ্ন ছিল না, এবং কোনো কিছু চুরিও যায়নি। এখন পর্যন্ত কোনো সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত
ধর্মেন্দ্র কাজে না গেলে এবং তার সাথে যোগাযোগ করা না গেলে এই ঘটনাটি প্রথম সামনে আসে। চিন্তিত সহকর্মীরা এক বন্ধুকে খবর দেন, যিনি এক আত্মীয়কে দম্পতির ফ্ল্যাটে পাঠান। তালাবিহীন ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে তারা মৃতদেহ দুটি দেখতে পান এবং সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে খবর দেন।
তদন্তের বিভিন্ন দিক
তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে সন্দেহ করলেও, তারা সম্ভাব্য দাম্পত্য কলহ, এমনকি একটি পরকীয়ার সম্পর্ককেও খতিয়ে দেখছেন। প্রতিবেশী এবং পরিচিতরা জানিয়েছেন, দম্পতি সম্প্রতি এই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন এবং তাদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালোই মনে হচ্ছিল। ধর্মেন্দ্র একটি বেসরকারি ব্যাংকের বীমা বিভাগে কাজ করতেন এবং সুমন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
পরিবারের সন্দেহ
সুমনের বাবা অজয় সিং এই ঘটনায় অস্বাভাবিকতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে তার মেয়ের দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের জানা মতে কোনো দাম্পত্য কলহ ছিল না। কর্তৃপক্ষকে খুনের বিষয়টিও তদন্ত করতে হবে।”
ফরেনসিক পরীক্ষা ও ডিজিটাল প্রমাণ
দম্পতির মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীরা তাদের মৃত্যুর আগের ঘটনাগুলির পরম্পরা খুঁজে বের করার জন্য কল রেকর্ড এবং মেসেজ পরীক্ষা করছেন।
অনাথ দুই কন্যা
এই মর্মান্তিক ঘটনায় দুটি ছোট মেয়ে, ১১ এবং ৮ বছর বয়সী, অনাথ হলো। তারা বর্তমানে গ্রীষ্মের ছুটিতে ভরতপুরে তাদের দাদা-দাদির কাছে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুদের এখনো তাদের বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।
আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনা কি অমীমাংসিত প্রেমের প্রতিশোধ ? জানুন এই রহস্য !
পুলিশের বক্তব্য
মুহানা পুলিশ জানিয়েছে, তারা এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবেই দেখছে, যদি না কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ অন্যথা প্রমাণ করে। স্টেশন অফিসার গুরু ভূপেন্দ্র বলেছেন, “আমরা সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। এই মুহূর্তে কোনো তত্ত্বই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।”
আবাসনে শোকের ছায়া
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আবাসিকদের মধ্যে শোকের ঢেউ তুলেছে। অনেক বাসিন্দা দম্পতিকে ভদ্র এবং হাসিখুশি বলে বর্ণনা করেছেন। তবে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ডিজিটাল রেকর্ড থেকে যে প্রমাণ উঠে আসছে, তা ইঙ্গিত দেয় যে বন্ধ দরজার আড়ালে হয়তো এমন কিছু ছিল যা কেউ বুঝতে পারেনি।
তবে মনে করা হচ্ছে ক্রোধের বশে স্বামী নিজের স্ত্রীকে হত্যা করেন এবং সেই নিথর দেহের অনুশোচনায় আত্মঘাতী হন , যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ।