ব্যুরো নিউজ ৪ জুন : বছর ঘোরার আগেই বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজতে শুরু করেছে। এই আবহেই উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে বড়সড় রদবদল ঘটল। বুধবার (৪ জুন, ২০২৫) কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন উত্তরবঙ্গের পরিচিত এবং প্রভাবশালী নেতা শঙ্কর মালাকার। তৃণমূল ভবনে দলের শীর্ষ নেতা অরূপ বিশ্বাস এবং সুব্রত বক্সীর উপস্থিতিতে তিনি ঘাসফুল শিবিরে নাম লেখান। শঙ্কর মালাকারের এই দলবদলকে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তৃণমূলের স্বাগত বার্তা: ‘উত্তরবঙ্গে আরও শক্তিশালী হব’
শঙ্কর মালাকারকে দলে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, “শঙ্কর মালাকারকে আমি দলে স্বাগত জানাচ্ছি। তিনি দুই বারের প্রাক্তন বিধায়ক। তাঁর আগমনে উত্তরবঙ্গে আমরা আরও শক্তিশালী হতে পারব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে তিনি এবার শামিল হচ্ছেন।” তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, শঙ্করের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং মাটিগাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক উত্তরবঙ্গে দলের ভিতকে আরও মজবুত করবে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
শঙ্কর মালাকারের দলবদলের কারণ: ‘বিজেপির সঙ্গে লড়তে কংগ্রেস পারবে না’
তৃণমূলে যোগ দিয়ে শঙ্কর মালাকার তার দলবদলের কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “২০১৪ সাল থেকে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গে ওরা ছারখার করছে। কামতাপুর, গোর্খাল্যান্ডের মতো আলাদা রাজ্যের লোভ দেখানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের সহজ সরল লোকজনকে লোভ দেখিয়ে বিজেপি সবকিছু তছনছ করছে।”
কংগ্রেসকে আক্রমণ করে শঙ্কর মালাকার বলেন, “বিজেপির সঙ্গে লড়তে গেলে কংগ্রেস থেকে হবে না। তৃণমূলই একমাত্র পারে বিজেপির সঙ্গে লড়তে।” নিজের ১০ বছরের বিধায়ক জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি আক্ষেপ করেন, “আমি ১০ বছর বিধায়ক ছিলাম, কিন্তু মানুষকে কোনো সেবা করতে পারিনি। শাসকদলে না থাকলে মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যায় না। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “যে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে শামিল হয়ে আগামীদিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে কাজ করতে চাই। তৃণমূল শক্তিশালী হবে উত্তরবঙ্গে। বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারবে।”
প্রদেশ কংগ্রেসের ক্ষোভ ও শঙ্কর মালাকারের জবাব
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগেই শঙ্কর মালাকারকে বহিস্কার করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। যদিও খোদ শঙ্কর মালাকারের দাবি, তিনি মঙ্গলবারেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে কে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। প্রদেশ নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শঙ্কর বলেন, “অযোগ্য প্রদেশ কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। প্রদেশ নেতৃত্বের সেই ক্ষমতা ও যোগ্যতা নেই।” তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “আগামীদিনে মাটিগাড়া নকশালবাড়ি কেন্দ্রে বিজেপিকে হারাব। ১৫ বছর উত্তরবঙ্গের অবজারভার ছিলাম, তাই মাটি চিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টক্কর নেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না।”
উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি: বিধানসভা নির্বাচনের রণনীতি
আগামী বছরই বিধানসভা নির্বাচন। গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের আশানুরূপ ফল হয়নি, বরং বিজেপির ফল ছিল চোখে পড়ার মতো ভালো। তাই এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সংগঠন শক্তিশালী করার কাজে জোর দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। কয়েকদিন আগেই চা-বলয়ের প্রভাবশালী নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লাকে (John Barla) দলে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে উত্তরবঙ্গের অন্যতম পরিচিত মুখ শঙ্কর মালাকারকে দলে নিয়ে তৃণমূল তার উত্তরবঙ্গ রণনীতি আরও স্পষ্ট করে দিল।
শঙ্কর মালাকারের রাজনীতিতে প্রবেশ কংগ্রেসের হাত ধরেই। মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক হিসেবে তিনি ২০১১ ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন। তবে, ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি বিজেপির আনন্দময় বর্মনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। শঙ্করের এই দলবদল উত্তরবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।