ব্যুরো নিউজ ২৮ জুলাই ২০২৫ : সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি. চিদাম্বরম এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তাঁর কথিত মন্তব্য অনুযায়ী, পাহালগাম হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীরা নাকি “হোমগ্রোন” অর্থাৎ দেশীয় হতে পারে এবং তাদের পাকিস্তান থেকে আসার কোনো প্রমাণ নেই! এই মন্তব্যে দেশজুড়ে চোখ কপালে উঠেছে অনেকের।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য একটি সাক্ষাৎকারের ক্লিপ শেয়ার করে এই বিতর্ক শুরু করেছেন, যেখানে কংগ্রেস নেতাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “তারা (NIA) কি সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করেছে, বা তারা কোথা থেকে এসেছে? আমরা যতদূর জানি, তারা হয়তো দেশীয় সন্ত্রাসী। কেন আপনারা ধরে নিচ্ছেন যে তারা পাকিস্তান থেকে এসেছে? এর কোনো প্রমাণ নেই।”
যাঁরা ভুলে গেছেন, তাঁদের জন্য স্মরণ করিয়ে দিই: গত ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরর পাহালগামে বর্বর সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে এবং LoC পেরিয়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী শিবিরগুলিতে নির্ভুল হামলা চালায়। তবে চিদাম্বরম সাহেবের দাবি অনুযায়ী, হয়তো আমরা ভুল করেছিলাম, বোমাটা আসলে ‘ নিজেদের ‘ ওপরেই ফেলেছিলাম!
কংগ্রেসের ‘পাকিস্তান প্রেম’ নাকি ‘অ্যাডভোকেট’ সুলভ বক্তব্য?
শাসক দল বিজেপি স্বভাবতই চিদাম্বরমের এই মন্তব্যে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে, কারণ এটি পাকিস্তানকে এক প্রকার ‘ক্লিন চিট’ দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এক্স-এ সাক্ষাৎকারের ক্লিপটি শেয়ার করে মালব্য প্রশ্ন তুলেছেন, কেন কংগ্রেস নেতারা ভারতের বিরোধী দলের চেয়ে ইসলামাবাদ-এর ডিফেন্স আইনজীবীদের মতো শোনেন।
মালব্য আরও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, “যখনই আমাদের বাহিনী পাকিস্তান-পৃষ্ঠপোষক সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করে, কেন কংগ্রেস নেতারা ভারতের বিরোধীদের চেয়ে ইসলামাবাদের ডিফেন্স আইনজীবীদের মতো শোনেন?” তিনি কংগ্রেস পার্টিকে ” consistently trying to protect enemies of the nation” ( বরাবর দেশের শত্রুদের রক্ষা করার চেষ্টা করে থাকে ) বলে অভিযুক্ত করেছেন। ব্যঙ্গ করে মালব্য যোগ করেছেন, “যখন জাতীয় নিরাপত্তার কথা আসে, তখন কোনো অস্পষ্টতা থাকা উচিত নয়। কিন্তু কংগ্রেসের ক্ষেত্রে তা কখনোই হয় না – তারা সবসময় শত্রুকে রক্ষা করার জন্য উল্টো হেঁটে থাকে!” বোঝাই যাচ্ছে, অমিত মালব্যের মতে, দেশপ্রেমের মাপকাঠিতে কংগ্রেসের অবস্থান ‘বিপরীত মেরুতে’।
চিদাম্বরমের প্রতিক্রিয়া: ট্রোলদের দোষ, নাকি সত্যের অপলাপ?
বিজেপির সমালোচনার জবাবে, চিদাম্বরম অভিযোগ করেছেন যে তাঁর সম্পূর্ণ রেকর্ড করা সাক্ষাৎকারটি “নিকৃষ্টতম ট্রোল” দ্বারা দমন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ট্রোলরা বিভিন্ন ধরনের হয় এবং ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে। সবচেয়ে খারাপ ধরনের ট্রোল হলো যে সম্পূর্ণ রেকর্ড করা সাক্ষাৎকারকে দমন করে, দু’টি বাক্য নেয়, কিছু শব্দ নীরব করে দেয় এবং বক্তাকে কালো রঙে আঁকে!”
তবে এই নাটকের আরেকটি মজার দিক হলো, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, কংগ্রেসের আইটি সেল ঠিক একই রকমের কীর্তি করেছিল অমিত শাহের পিছিয়ে পড়া জনজাতি শ্রেণীর বক্তব্যকে ঘিরে। সেই সময় পি. চিদাম্বরমের কোনো নিন্দা শোনা যায়নি। এখন তিনি আশা করছেন যে, তাঁর মন্তব্যকে সঠিক পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহার করা হোক! অন্যের বেলায় যা ট্রোলিং, নিজের বেলায় তা ‘মিথ্যাচার’ – রাজনীতির এই রঙ্গমঞ্চে চিদাম্বরম সাহেবের এই বক্তব্য যেন এক নতুন কমেডি!
পাহালগামের বাস্তবতা: ‘হোমগ্রোন’ সমর্থক এবং পাকিস্তানের নিরাপদ আশ্রয়
পাহালগামের সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিল বহু পাক মদতপুষ্ট আঞ্চলিক কাশ্মীরি, যারা ভারতীয় পর্যটকদের সঠিক সময় এবং গন্তব্য সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল। যারা নির্বিচারে গুলি চালায়, অতঃপর তারা সেই আঞ্চলিক লোকজনের সাহায্যেই সেনাবাহিনীার নজর এড়িয়ে দুর্গম সীমান্ত পার করে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। যদিও পাহালগামে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩ জঙ্গি এবং তারপরেও জম্মু কাশ্মীর জুড়ে বহু জঙ্গিকে নিকেশ করা হয় – কিন্তু যে সম্ভবত পাক কমান্ডোরা সন্ত্রাসের কাজটি করেছেন, তারা আজও পাকিস্তানের আশ্রয়ে অধরা!
সুতরাং, চিদাম্বরম সাহেবের ‘হোমগ্রোন’ তত্ত্ব যদি সত্যি হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের সন্ত্রাসীরা এতটাই ‘আত্মনির্ভরশীল’ যে তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য ‘হোম ডেলিভারি’র ব্যবস্থা করে নিয়েছে, শুধু শেষ আশ্রয়টুকু পাকিস্তানের ভূখণ্ডে খুঁজে নেয়। হয়তো এটাই আধুনিক সন্ত্রাসবাদের ‘আত্মপ্রকাশ’, কে জানে!