ব্যুরো নিউজ, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ : দেশজুড়ে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ ও হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন অধীর বাবু। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রুতা সরিয়ে রেখে বাংলার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।
বাংলা বলা কি অনুপ্রবেশের লক্ষণ?
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে অধীর চৌধুরী অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, এ দেশেরই নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে দেগে দেওয়া হচ্ছে। তিনি লেখেন, “ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে (মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যে) চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাদের একমাত্র অপরাধ হলো তারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন, যা স্থানীয় প্রশাসন প্রায়শই বুঝতে ভুল করে তাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের নাগরিক ভেবে চরম হেনস্তা ও নির্যাতন করছে।”
ওড়িশায় বাংলার যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু
এই সাক্ষাতের প্রেক্ষাপটে রয়েছে ওড়িশার সম্বলপুরের এক মর্মান্তিক ঘটনা। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের ৩০ বছর বয়সী পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল রানা সম্প্রতি সেখানে পিটিয়ে খুন হন। অভিযোগ, বিড়ি নিয়ে তুচ্ছ বচসা থেকে শুরু করে ভাষাগত সমস্যার জেরে তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়। এছাড়া মুম্বইতেও সম্প্রতি দুই বাঙালি শ্রমিককে অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধীর চৌধুরী চিঠিতে মনে করিয়ে দেন যে, এই শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ঘাম ঝরান, অথচ আজ তারাই আতঙ্কিত।
পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের উদ্বেগজনক রিপোর্ট
পরিসংখ্যান বলছে, সমস্যাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বিভিন্ন রাজ্য থেকে হেনস্তার ১,১৪৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি থেকে আসা। অধীর চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন যেন সমস্ত রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক (Sensitize) করা হয়, যাতে নিরপরাধ শ্রমিকদের ভাষাগত পরিচয়ের কারণে কোনো বিচারবহির্ভূত হেনস্তার শিকার হতে না হয়।
রাজনৈতিক জল্পনা ও মতুয়া আতঙ্ক
একদিকে যখন অধীর বাবু শ্রমিকদের নিয়ে সরব, অন্যদিকে এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। বহরমপুরে ইউসুফ পাঠানের কাছে পরাজয়ের পর দলের অন্দরে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন অধীর। তৃণমূলের দাবি, তিনি বিজেপিতে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করছেন। যদিও অধীর চৌধুরী এই বৈঠককে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করেছেন। বৈঠকে তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটার তালিকা (SIR) থেকে নাম বাদ পড়ার আতঙ্ক নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে সূত্রের খবর।
অধীর চৌধুরীর এই তৎপরতা একদিকে যেমন জাতীয় রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে, অন্যদিকে বাংলার সাধারণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের ওপর বড়সড় চাপের সৃষ্টি করেছে।


















