congress kharge us tariff

ব্যুরো নিউজ ২৭শে আগস্ট ২০২৫ : ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বুধবার সকাল ৯:৩১ থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে অধিকাংশ ভারতীয় পণ্যের উপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। এই পদক্ষেপের কারণে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় পণ্য প্রভাবিত হতে চলেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদী সরকারের পররাষ্ট্র নীতিকে একটি “বিপর্যয়” বলে তীব্র আক্রমণ করেছেন।

শুল্ক আরোপের কারণ ও প্রেক্ষাপট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের মূল কারণ ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়। এর আগে গত ৭ই আগস্ট ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর প্রথম দফায় ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। নতুন শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন বাজারে ভারতের পণ্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে, যা ব্রাজিলের পর ভারতকে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এই উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। তবে, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ এর আগে যেসব পণ্য আমেরিকায় পৌঁছে যাবে, সেগুলোকে এই শুল্কের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল, জ্বালানি ও ইলেকট্রনিক পণ্য এই শুল্কের বাইরে থাকবে।

India – USA trade : ৫০% শুল্ক আরোপের নোটিশ যুক্ত রাষ্ট্রের : ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন মোড়

অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ও ক্ষতিগ্রস্ত খাত

এই শুল্কের ফলে ভারতের অর্থনীতিতে ২.১৭ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, বেশ কিছু শ্রমনির্ভর ও রপ্তানিমুখী ক্ষেত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • বস্ত্র ও পোশাক: ১০.৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি প্রভাবিত হবে, যার প্রভাব তিরুপুর, এনসিআর এবং বেঙ্গালুরুর মতো কেন্দ্রে পড়বে।
  • হীরা ও গয়না: ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ঝুঁকিতে পড়বে, যা সুরাট এবং মুম্বাইয়ের কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করবে।
  • চিংড়ি: বিশাখাপত্তনমের চিংড়ি খামার থেকে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
  • কৃষিপণ্য: ৬ বিলিয়ন ডলারের বাসমতি চাল, মশলা এবং চায়ের রপ্তানি প্রভাবিত হবে, যার ফলে পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশ লাভবান হতে পারে।
  • অন্যান্য: চামড়া ও জুতা, কার্পেট, হস্তশিল্প, রাসায়নিক, এবং বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক যন্ত্রপাতির মতো শিল্পগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মোট রপ্তানির ৬৬ শতাংশ, যার আর্থিক মূল্য ৬০.২ বিলিয়ন ডলার, এখন ৫০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি।

 

কংগ্রেসের তোপ: ‘পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা’

মার্কিন শুল্ক আরোপের তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদী সরকারের পররাষ্ট্র নীতিকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের পররাষ্ট্র নীতির এক বিপর্যয়, এবং সরকার জানে না কীভাবে এর মোকাবিলা করবে।” খাড়গে অভিযোগ করেন যে মাসব্যাপী আলোচনার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

খাড়গে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই শুল্কের ফলে প্রায় ৫০০,০০০ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে। বিশেষ করে চিংড়ি চাষের সাথে যুক্ত প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের জীবিকা সরাসরি হুমকির মুখে। তিনি মোদীর ‘হাসি, আলিঙ্গন ও সেলফির’ মতো উপরিউক্ত পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে বলেন, একটি শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতির জন্য বাস্তব ভিত্তি প্রয়োজন। খাড়গে ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার দাবি নিয়ে মোদীর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

PM Modi : মার্কিন শুল্ক দ্বিচারিতার মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘স্বদেশী’ বার্তা !

ক্ষতির পরিমাণ ও জিডিপির উপর প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে এই শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) প্রায় ১ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কংগ্রেসের দাবি অনুযায়ী, এটি ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য একটি বড় আঘাত এবং দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় একটি শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি অত্যন্ত জরুরি। যদিও বাণিজ্য এবং অর্থনীতির এই ক্ষতি সাময়িক, মার্কিন বাজার যেমন ভারতীয় পণ্য আমদানির বিকল্প সূত্র খুঁজবে, ভারতও নিজের পণ্যের রপ্তানির বিকল্প ক্রেতা খুঁজে নেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর