ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ৩ এপ্রিলঃ এবার বঙ্গপোসাগর ও ভারত মহাসাগরকে নিজের আয়ত্বে আনতে মায়ানমারের কোকো দ্বীপপুঞ্জে(Coco Island) ঘাঁটি বানাচ্ছে চিন। কোকো দ্বীপের সেনার পরিকাঠামো বাড়াচ্ছে PLA (Peoples Liberation Army)। বিমান চালনার জন্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হয়েছে ওই দ্বীপে। ম্যাক্সার টেকনোলজির উপগ্রহের মাধ্যমে এই চিত্র ধরা পরতেই উদ্বেগ বাড়ল নয়াদিল্লিতে। ওই উপগ্রহর ছবি থেকেই পরিষ্কার যে কোকো দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে চিন। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সংঘাত বারাবরই উদবেগে রেখেছে ভারত সরকারকে। সাম্প্রতিককালে চীনা সৈন্যদের সঙ্গে একাধিক সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সেনার সংঘর্ষের খবরেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বংপোসাগরের বুকে নতুন চিনা সামরিক ঘাঁটি অবশ্যই ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।
কোকো দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস
কোকো দ্বীপপুঞ্জ, যা কলকাতার ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপাঞ্চল। এই দ্বীপপুঞ্জ, যা ভূতাত্ত্বিকভাবে আরাকান পর্বতমালা বা রাখাইন পর্বতমালার একটি বর্ধিত বিভাগ, দীর্ঘ প্রসারিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপগুলির একটি শৃঙ্খল তৈরি করেছে, অনেকটা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জর মতো। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের উত্তরে অবস্থিত এই দ্বীপগুলি ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের মতো একই ভূ-সংস্থানের অংশ। যাইহোক, কোকো দ্বীপপুঞ্জ এখন মায়ানমারের অংশ, কারণ এই দ্বীপগুলির উপর দাবি করার জন্য ভারতীয় নেতৃত্বের অনীহা।
১৯ শতকের গোড়ার দিকে, ভারতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশে দোষীদের কয়েদ রাখার জন্য আন্দামানে একটি সেলুলার জেল প্রতিষ্ঠা করে।কোকো দ্বীপপুঞ্জ ছিল এর খাদ্যের উৎস। ব্রিটিশ সরকার বার্মার জাদওয়েট পরিবারকে দ্বীপগুলো লিজ দিয়েছিল বলে জানা যায়।
কোকো দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ ইজারা দেওয়ার ফলে ভারতে ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) সরকারের কাছে তার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। ১৮৮১ সালে কোকো দ্বীপপুঞ্জ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ বার্মার অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৩৭ সালে বার্মা ব্রিটিশ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেও দ্বীপগুলি একটি স্ব-শাসিত উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল।
লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মতোই, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা যখন ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন কোকো দ্বীপপুঞ্জের অবস্থা অচল ছিল। এমন একটি প্রেক্ষাপটে, ব্রিটিশ রাজ স্বাধীন ভারতকে লাক্ষাদ্বীপ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং কোকো দ্বীপপুঞ্জ সহ নির্দিষ্ট কৌশলগত অবস্থানগুলি অস্বীকার করার পরিকল্পনা করেছিল। ব্রিটিশরা চেয়েছিল ভারতকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করতে যাতে তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে।
উল্লেখ্য, শুধু পাকিস্তান ও চীনকে ভূখণ্ড উপহার দেওয়া নয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস পার্টি কৌশলগতভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় ভূখণ্ড হস্তান্তরের জন্য দায়ী। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সিদ্ধান্তহীনতার কারণে জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের বিস্তীর্ণ অংশ আজ ভারতের মানচিত্রের বাইরে।
নেহরুর কৌশলগত বোধগম্যতার অভাব এবং ব্রিটিশদের সঙ্গে কঠিন দর কষাকষি করার মতো দৃঢ়তার অভাব ,এই দু-ধরনের অক্ষমতার কারণে ভারত কাশ্মীরের একটা বড় অংশের পর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কৌশলগত দ্বীপ – কোকো দ্বীপপুঞ্জও হারিয়েছে। (EVM News)