ব্যুরো নিউজ ২ জুন : ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI) বিচারপতি বি.আর. গাভাই শনিবার এক নতুন নির্মিত অ্যাডভোকেট চেম্বার বিল্ডিং এবং মাল্টি-লেভেল পার্কিং কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ভারতীয় সংবিধানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে CJI গাভাই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন, তাঁকে দেশের অন্যতম শক্তিশালী এবং পরিশ্রমী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করেন।
সংবিধানই সংকটের সময়ে ভারতকে একত্রিত রেখেছে: প্রধান বিচারপতি
৬৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই অবকাঠামোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে CJI গাভাই গত ৭৫ বছর ধরে সংবিধানের ঐক্যবদ্ধকারী ভূমিকার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “প্রতিবার যখন জাতি সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, আমরা আরও শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছি। এই শক্তি সংবিধান থেকেই আসে।”
তিনি আরও বলেন যে, আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের অবদান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা নিশ্চিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, “জমিদারদের কাছ থেকে ভূমিহীনদের কাছে জমি বিতরণের মতো ভূমি সংস্কারগুলো সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমর্থিত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল।”
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
মৌলিক অধিকার এবং নির্দেশমূলক নীতি: সংবিধানের দুই স্তম্ভ
১৯৭৩ সালের ঐতিহাসিক কেশবানন্দ ভারতী মামলার উল্লেখ করে CJI গাভাই জোর দিয়ে বলেন যে, যদিও সংসদের মৌলিক অধিকার সংশোধনের ক্ষমতা আছে, তবে তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে পরিবর্তন করতে পারে না। তিনি বলেন, “মৌলিক অধিকার এবং নির্দেশমূলক নীতি উভয়ই সংবিধানের আত্মা। তারা একটি সোনালী রথের দুটি চাকার মতো — যদি একটি থেমে যায়, তবে পুরো রথটি থেমে যায়।”
বার এবং বেঞ্চ একই মুদ্রার দুই পিঠ
আইনজীবী এবং বিচারকদের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে CJI গাভাই বলেন, “ন্যায়বিচারের চাকা এগিয়ে নিতে বার (আইনজীবী) এবং বেঞ্চ (বিচারক) কে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে।” তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রশংসা করে বলেন যে, এটি একটি জাতীয় উদাহরণ তৈরি করেছে, কারণ বেশ কয়েকজন বিচারক আইনজীবীদের জন্য নতুন চেম্বার নির্মাণে সুবিধার জন্য তাঁদের বাংলো খালি করেছেন।
আইনজীবী সমাজের জন্য সরকারি সহায়তা: মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অতিথি হিসাবে ভাষণ দিতে গিয়ে আইনজীবীদের কল্যাণে অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই সাতটি জেলায় আইনি কমপ্লেক্সের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে, যার জন্য ১৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আইনজীবীদের জন্য আর্থিক সহায়তার কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, “অ্যাডভোকেট কল্যাণ তহবিল ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে এবং যোগ্যতার বয়সসীমা ৬০ থেকে ৭০ বছর করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।”
মহাকুম্ভ আয়োজনে হাইকোর্টের ভূমিকার প্রশংসা
মুখ্যমন্ত্রী যোগী প্রয়াগরাজে সফলভাবে মহাকুম্ভ আয়োজনে এলাহাবাদ হাইকোর্টের সহযোগিতার কথাও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এটি সম্ভব হয়েছিল কারণ হাইকোর্ট কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে স্থগিতাদেশ দেয়নি।”
এলাহাবাদ হাইকোর্টে নতুন হাই-টেক অবকাঠামো
নতুন উদ্বোধন করা মাল্টি-লেভেল পার্কিং কমপ্লেক্সে ৩,৮৩৫টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং এতে ২,৩৬৬টি অ্যাডভোকেট চেম্বার অন্তর্ভুক্ত। ১৪ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটিতে পাঁচ স্তরের পার্কিং, ছয় তলা চেম্বারের জন্য নির্দিষ্ট এবং এটি ২৬টি লিফট, ২৮টি এসকেলেটর এবং চারটি ট্র্যাভেলেটর দিয়ে সজ্জিত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ
এই অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যেমন বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিক্রম নাথ, জে.কে. মহেশ্বরী, পঙ্কজ মিথাল এবং মনোজ মিশ্র। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ বনসালী এবং দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.কে. উপাধ্যায়।