ব্যুরো নিউজ ২৮ অক্টোবর ২০২৫ : চন্দননগরের হেলাপুকুর এলাকার জগদ্ধাত্রী প্রতিমা এই বছর স্বর্ণ ও হীরার গহনায় সেজে উঠেছে। ভক্তরা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় দেবীকে “সোনার মা” নামে অভিহিত করছেন।
কিন্তু কেবল এই জৌলুসই পুজাটিকে জনপ্রিয় করেনি; একটি মানবিক এবং জনহিতকর কাজও হেলাপুকুরকে বিশেষ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই মানবিক কাজের ফলে এক শিশুকন্যা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।
বিরল রোগে আক্রান্ত অস্মিকার হাতে উদ্বোধন
পুজাটির উদ্বোধন কোনো তারকার দ্বারা হয়নি, বরং এই শিশুকন্যার হাতেই হয়েছে। এবার উদ্বোধক ছিল রাণাঘাটের বাসিন্দা অস্মিকা, যে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (Spinal Muscular Atrophy, SMA)-এর মতো বিরল রোগ থেকে আরোগ্যের পথে।
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA) একটি বিরল, বংশগত জেনেটিক রোগ, যা মেরুদণ্ডের মোটর নিউরনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্রমেই পেশির দুর্বলতা ও ক্ষয় ঘটায়। এই রোগে মস্তিষ্কের বার্তা পেশিতে পৌঁছাতে পারে না, ফলে পেশির ক্ষতি হয় ও তা শুকিয়ে যেতে থাকে।
চিকিৎসার বিপুল খরচ জুগিয়েছে পুজা কমিটি
অস্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস জানিয়েছেন, “আমার সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। আমার পক্ষে এই তহবিল জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব ছিল। কিন্তু চন্দননগর হেলাপুকুর জগদ্ধাত্রী পুজা কমিটি এগিয়ে আসে এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য করেন।” তিনি জানান, শেষে অত্যন্ত দামি ওষুধ কেনা সম্ভব হয় এবং অস্মিকার দেহে তা ইনজেক্ট করা হয়। এখন ইতিবাচক উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমার নিষ্প্রাণ মুখে এখন আনন্দের হাসি।”
পুজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত সরকার জানান, এই বছর তাঁদের ৫৬তম পুজা উদযাপিত হচ্ছে। তিনি প্রকাশ করেন যে, শহরের একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী তাঁর ভক্তি ও বিশ্বাস থেকে ‘মা জগদ্ধাত্রী’কে এই অলঙ্কারে সাজানোর প্রস্তাব দেন, যা প্রতিমাকে এক জমকালো রূপ দিয়েছে।
সেবাই ধর্ম: মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
শনিবার চতুর্থীর দিন, ‘সোনার মা’-এর পুজা রাজ্যমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে অস্মিকার হাতে উদ্বোধন হয়। গর্বিত বাবা শুভঙ্কর দাস কমিটির এই উদ্যোগে অত্যন্ত খুশি। কমিটির এই মানবিক পদক্ষেপকে তিনি মানবসেবা ও পরোপকারের দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন পুজা কমিটির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, তাদের জনহিতকর কার্যকলাপ এই শিশুটির জীবন বাঁচিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চন্দননগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
অস্মিকার বাবা বলেন, “আমার মেয়ের মতো আরও অনেক শিশু ব্যয়বহুল চিকিৎসার অভাবে ভুগছে। এই পুজা কমিটি যথার্থ অর্থে ‘মানবসেবাই ঈশ্বর সেবা’-র মূল মন্ত্রটি পালন করছে।”




















