ব্যুরো নিউজ ২৮ মে : যখন ভারত আইপিএল ২০২৫ ফাইনালে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বীরদের সম্মান জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে, ঠিক তখনই আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক বিচিত্র কূটনৈতিক নাটক জমে উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডাকে ৫১তম মার্কিন রাজ্য বানানোর অব্যাহত দাবির মুখে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস যেন তার শেষ মোক্ষম চালটি দিয়েছেন। এই অদ্ভুত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, যা হাস্যরস এবং উদ্বেগের এক অদ্ভুত মিশেল তৈরি করেছে।
ট্রাম্পের ‘সোনালী গম্বুজ’ অফার: সার্বভৌমত্বের দাম কি শুধুই ‘ফ্রি’ সুরক্ষা?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, কানাডা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হতে রাজি হয়, তবে ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের উচ্চাভিলাষী ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা তারা ‘বিনামূল্যে’ পাবে। ট্রাম্প তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নেটওয়ার্কে লিখেছেন, “আমি কানাডাকে বলেছি, যারা আমাদের দুর্দান্ত গোল্ডেন ডোম সিস্টেমের অংশ হতে খুব আগ্রহী, তাদের যদি একটি পৃথক দেশ হিসেবে থাকে, তাহলে ৬১ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। কিন্তু যদি তারা আমাদের প্রিয় ৫১তম রাজ্য হয়, তাহলে খরচ হবে শূন্য ডলার।”
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
এই ‘সোনালী গম্বুজ’ ২০২৯ সালের শুরুর দিকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত। এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থা ভূমি ও মহাকাশ-ভিত্তিক ক্ষমতা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রকে উৎক্ষেপণের আগেই, উড়ানের প্রাথমিক পর্যায়ে, মাঝপথে বা চূড়ান্ত পর্যায়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ঠিক আগে শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম। অর্থাৎ, ট্রাম্পের অফারটি যেন এক ধরনের ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি’ – সার্বভৌমত্ব বেচে দিলে সুরক্ষা বিনামূল্যে!
রাজা চার্লসের ‘দুর্গম’ সফর: কানাডার সার্বভৌমত্ব বাঁচাতে রাজকীয় ভাষণ
ট্রাম্পের বারংবার কানাডাকে দখল করার ইঙ্গিতের মুখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সম্ভবত শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে রাজা চার্লসকে আমন্ত্রণ জানান পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার জন্য। মঙ্গলবার কানাডিয়ান পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাজা চার্লসের ভাষণকে ট্রাম্পের সংযুক্তি হুমকির মুখে কানাডার প্রতি এক দৃঢ় সমর্থনের প্রদর্শনী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজা চার্লস তাঁর ফরাসি ভাষার ভাষণে বলেন, “আমাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমাদের বিশ্ব কখনও এত বিপজ্জনক এবং অস্থির ছিল না। কানাডা এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যা আমাদের জীবদ্দশায় নজিরবিহীন।” তিনি আরও যোগ করেন যে, “অনেক কানাডিয়ান তাদের চারপাশে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন।” রাজা কানাডার সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “সত্যিই উত্তর শক্তিশালী এবং স্বাধীন।” ব্রিটেনের রাজা হিসেবে, যিনি কানাডার রাষ্ট্রপ্রধানও, তাঁর পক্ষে পার্লামেন্টে ‘ভাষণ ফ্রম দ্য থ্রোন’ দেওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা। এর আগে তাঁর মা, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মাত্র দুবার এই কাজটি করেছিলেন। প্রায় ৭০ বছর পর তাঁর মা প্রথম পার্লামেন্ট খুলেছিলেন, সেই কথা উল্লেখ করে রাজা জানান, তিনি নিজেও ২০ বার কানাডা সফর করেছেন।
কানাডার দ্বিধা: ডলারের হিসাবে দেশপ্রেম?
যদিও রাজা চার্লস কূটনৈতিকভাবে কানাডার সার্বভৌমত্বকে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার কথা নিশ্চিত করেছেন। এটি কানাডার জন্য এক অদ্ভুত নৈতিক ও আর্থিক উভয় সংকটের জন্ম দিয়েছে। একদিকে রাজার মাধ্যমে সার্বভৌমত্বের ঘোষণা, অন্যদিকে ট্রাম্পের আকাশছোঁয়া প্রস্তাব। কানাডার দেশপ্রেম এখন ডাম্পলিংয়ের মতো ফুলেফেঁপে উঠছে না কি মার্কিন ডলারে তার মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে, তা-ই এখন দেখার বিষয়!
এই পুরো ঘটনাটি আধুনিক আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক হাস্যকর কিন্তু গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে – যখন সামরিক সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রলোভন সার্বভৌমত্বের ধারণাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে, তখন ‘জাতীয়তা’ এবং ‘স্বাধীনতা’র প্রকৃত মূল্য কী?
