Firhad-Bharati-Suvendu

ব্যুরো নিউজ ৯ জুন : ‘অপারেশন সিঁদুর’ – এই শব্দবন্ধটি এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীরের পাহালগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যার ঘটনা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাল্টা অভিযানের প্রশংসা করে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু সেই খসড়া প্রস্তাব থেকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দটি বাদ যাওয়ায় ক্ষুব্ধ বিজেপি। এর মধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষের মধ্যে পাকিস্তান এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘ভয়’ পাওয়া নিয়ে চলছে বাকযুদ্ধ। এই গোটা ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ফিরহাদ হাকিমের ‘পাকিস্তানপ্রেমী’ মন্তব্য ও ভারতী ঘোষের পাল্টা আক্রমণ:

শনিবার কলকাতা পৌরসভার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন যে, একটি বড় দেশের ভয়ে কাপুরুষের মতো সেনাবাহিনীকে থামানো হয়েছে। তাঁর দাবি, “ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের জীবন দিয়ে, তাদের ক্ষমতা দিয়ে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এখানে মহান কিছু করেননি। বরং, একটি বৃহৎ দেশের ভয়ে কাপুরুষের মতো সেনাবাহিনীকে থামানো হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। আমাদের সেনাবাহিনী ভারতের সম্মান রক্ষা করেছে। আমরা আজ তাদের স্যালুট জানাচ্ছি।” এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষ। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ফিরহাদকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, “ফিরহাদ হাকিম সাহেব পাকিস্তানকে যে বড় দেশ হিসেবে দেখছেন, কোথায় বড়? কীসে বড়? পাকিস্তানের ভূমি এলাকা ৭ লক্ষ ৯৬ হাজার ৯৫ বর্গ কিমি, যেখানে ভারতের ভূমি এলাকা ৩২ লক্ষ ৬৭ হাজার ২৬৩ বর্গ কিমি। তাহলে ভৌগোলিক দিক দিয়ে পাকিস্তান বড় নয়। জনশক্তিতে বড় নয়। সেনাবাহিনী, অস্ত্র কীসে বড়? এমনকি ভারতবর্ষে যে সংখ্যালঘু রয়েছেন তাঁদের সংখ্যা পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের থেকে বেশি।”

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

ভারতী ঘোষ আরও বলেন, “আজ কলকাতার প্রথম নাগরিক হঠাৎ পাকিস্তানপ্রেমী হয়ে উঠেছেন তা নয়। আগেও ডন পত্রিকার সাংবাদিককে নিজের নির্বাচন কেন্দ্র দেখিয়ে বলেছিলেন এটি মিনি পাকিস্তানের মতো।” তিনি ফিরহাদের ইসলামে জন্ম না নেওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলার মন্তব্যেরও নিন্দা করেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন যে ভারতের বায়ুসেনা মাত্র ২৫ মিনিটে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছিল, যা সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ‘ভয় পেয়েছেন’ মন্তব্যের জবাবে ভারতী বলেন, “যেখানে সমস্ত ভারতবাসী মিছিল করে ভারতীয় সেনার জয় জয়কার করছে। এখানকার প্রতিনিধি দল বিদেশে গিয়ে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বোঝাচ্ছে। সেখানে একজন কলকাতার প্রেমে গদগদ হয়ে বলছেন বড় দেশ তো, প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন, তিনি নাকি ভয় পেয়ে সংঘর্ষবিরতি করেছেন। আমরা এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছি। তিনি কীসের জন্য দুঃখ পেয়েছেন?”

বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য টেনে ফিরহাদকে নিশানা করে বলেন, “আপনার দলের সাংসদ তিনি জাপান ও সিঙ্গাপুরে বলেছেন পাকিস্তান পাগল কুকুরের হ্যান্ডলারে আর আপনি বলছেন পাকিস্তান বড় দেশ? পাকিস্তানে চলে যান…। ওই সাংসদের উচিত ফিরহাদ বাবুকে বোঝানো অপারেশন সিঁদুরের গুরুত্ব।” ভারতী ঘোষ এও দাবি করেন যে, ফিরহাদ হাকিম বিএসএফকেও অপমান করেছেন।
যদিও এই গোটা প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ , ‘বড় দেশ ‘ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কে বোঝাতে চেয়েছেন , এবং ভারতের কুটনৈতিক অবস্থানকে কটাক্ষ করেছেন !

বিধানসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ বাদ ,  বিজেপির ক্ষোভ :

সোমবার থেকে বিধানসভার বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে এবং মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ২৬ জন পর্যটকদের হত্যার নিন্দা এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করে একটি প্রস্তাব আলোচনার জন্য পেশ করা হবে। তবে, বিধানসভার বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা প্রস্তাবের খসড়া থেকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দটি বাদ যাওয়ায় বিজেপি ক্ষুব্ধ। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক বিধায়ক দলীয় সদস্য বলেছেন, “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী দেশের গর্ব এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে তাদের সফল অভিযানের নামকরণ করা হয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। সুতরাং, ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দটির উল্লেখ না থাকা একই সশস্ত্র বাহিনীর অপমান।” এই বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে, রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন যে, প্রস্তাবের খসড়া তৈরির জন্য যারা দায়ী, তাদের ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানের নামকরণের ভিত্তি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। তিনি যোগ করেন, “বিষয়টির বিশদ বিবরণ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তুলে ধরবেন। তবে আমি শুধু বলতে পারি যে, প্রস্তাবের খসড়া থেকেই জ্ঞানের অভাব স্পষ্ট।”

মঙ্গলবার প্রস্তাব আলোচনার জন্য পেশ করা হলে, বিরোধী দলনেতা উঠে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাবেন। যেহেতু এই প্রস্তাব বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই পেশ করবেন, তাই তৃণমূল কংগ্রেসের কেউই এই বিতর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মাসে বলেছিলেন যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সিন্ধুর প্রতি মানুষের অনুভূতিকে রাজনৈতিক লাভের জন্য ব্যবহার করার অভিযোগও করেছিলেন। তার এই মন্তব্য বিজেপি নেতাদের তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল, যারা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তানের ভাষ্য প্রতিধ্বনিত করার অভিযোগ এনেছিলেন।

মোদী, শুভেন্দু এবং মমতার তরজা : ‘নির্মম সরকার’ এবং ‘সিঁদুর’ রাজনীতিতে উত্তাল বাংলা

শুভেন্দু অধিকারীর ‘শাঁখা-সিঁদুর’ ও হিন্দু ভোটের বার্তা:

এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হিন্দুদের একজোট হয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন। সন্দেশখালিতে তিনি বলেন, “উত্তরপ্রদেশ, অসম দেখছেন, আমাদের এখানেও দেখতে পাবেন। ৫০০-১০০০০ টাকায় শাঁখা-সিঁদুর বিসর্জন দেবেন না। বিজেপি এলে পরের মাস থেকে ৩ হাজার টাকা করে দেব”। তিনি যোগ করেন, “ভাগ হবেন না, একজোট হোন”। পশ্চিমবঙ্গে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি , আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই ব্যাপারে স্বার্থপর উদাসীনতা রাজ্যে ধর্মীও মেরুকরণকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে !!!

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর