ব্যুরো নিউজ ১৬ অক্টোবর ২০২৫ : রাজ্যে নারী নির্যাতন এবং আদিবাসী নেতাদের ওপর সন্ত্রাসকে কেন্দ্র করে গতকাল, বুধবার, বিজেপি এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে। কলেজ স্ট্রিট থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই মিছিলের মঞ্চ থেকে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা একাধিক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন, যার মধ্যে তৃণমূল বিরোধিতা ছিল অন্যতম। নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রধান বিষয়গুলির মধ্যে ছিল আসন্ন নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনী (SIR) এবং বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোকাবিলা করা।
ভবানীপুর নিয়ে চরম বিতর্ক
ভবানীপুর আসনে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বহিরাগত’ তত্ত্বকে কেন্দ্র করে বিজেপি নেতারা চরম আক্রমণ শানিয়েছেন।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বহিরাগত’ তত্ত্বের চরম পাল্টা আক্রমণ করে বলেন:
“কোন্ বহিরাগতের কথা বলছেন? ভারতের প্রত্যেকটা নাগরিকের ভারতের প্রত্যেকটা কোণায় থাকার এবং যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে, মমতার ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব সংবিধান বিরোধী। SIR প্রক্রিয়ার পরে মমতা ব্যানার্জি এই ভবানীপুর কেন্দ্রে অন্ততপক্ষে ২০,০০০ ভোটে হারবে! মমতা ব্যানার্জিকে আমি নন্দীগ্রামে হারিয়েছি, এইবার ভবানীপুরে ওনাকে বিজেপির মনোনীত প্রতিনিধি হারাবে, এবং সেই ব্যবস্থা আপনাদের এই বিরোধী দলনেতা করবে!”
কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের প্রশ্ন :
কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ভবানীপুর নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বহুতল নির্মাণ ও অবাঙালি বাসিন্দাদের নিয়ে মমতার দাবিকে তিনি অদ্ভুত বলে উল্লেখ করেন:
“মমতা ব্যানার্জি একটি অদ্ভুত দাবি করছে, বলছে যে গরিবদের জমি দখল করে বহুতল আবাসন গড়ে সেখানে অবাঙালি বাসিন্দা সমস্ত এসে ঢুকে পড়েছে – আমি জানতে চাই এই সব বহুতল আবাসন নির্মাণের ছাড়পত্র কোন্ প্রশাসন দেয়? কলকাতা কর্পোরেশন থেকে অনুমতি প্রদান করে মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আপনারা সাংবাদিকরা গিয়ে মমতাকে প্রশ্ন করুন – যে ফিরহাদ হাকিম সাহেব ওনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে নাকি?”
অর্জুন সিংয়ের ‘বাড়ি দখলের’ অভিযোগ
বিজেপি নেতা অর্জুন সিং ভবানীপুরে বেড়ে ওঠা বহুতল নির্মাণ রহস্যের ওপর আলোকপাত করে অভিযোগ করেন, সেখানে বাড়ি দখল ও জমি দখলের কাজ তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমেই হয়:
“মমতা ব্যানার্জির এলাকার মধ্যে, কোনো লোক নিজের বাড়ি পর্যন্ত মেরামত করতে পারেনা, বাড়িতে হাত দিলেই, মমতা ব্যানার্জির ভাইরা গিয়ে সেই বাড়ি দখল করে নেবে! সব ভাইরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কে কোন্ বাড়িটা দখল করবে। সুব্রত বক্সীর ভাই ঐ অঞ্চলে অবাঙালি প্রোমোটারদের সাথে মিলেই বহুতল নির্মাণ করে। যার বিরোধিতা আবার অভিষেক ব্যানার্জি করেন। ভবানীপুরে অবাঙালি সংখ্যা বরাবরই তুলনামূলকভাবে বেশি। বহুতলের বাসিন্দারা ভোটের দিন যদি মত দান করতে নামেন, তাহলে মমতা ব্যানার্জি কম করেও ৪০,০০০ ভোটে হারবে!”
SIR ও অনুপ্রবেশকারী বিতর্ক
একই মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় পূর্ণমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার আসন্ন ভোটার তালিকা সংশোধনী প্রক্রিয়া (SIR) নিয়ে তৃণমূল সমর্থকদের প্রতি কড়া সতর্কবার্তা দেন।
তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি ছিল:
“যারা বাংলাদেশ থেকে মুসলিমরা এই দেশে এসেছেন, তাঁদের স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আপনারা অনুপ্রবেশকারী, আপনাদেরকে ফিরে যেতে হবে, আমরা পাঠাবো ফেরত। আমরা ভারতীয় জনতা পার্টি চাই, প্রত্যেকটা ভারতীয় নাগরিকের নাম যেন ভোটার তালিকায় থাকে। আমি সাধারণ মুসলিম পরিবার, যারা আমাদের ভোট দেন না, তাঁদেরকেও বলছি, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কথা শুনে রাস্তায় নামবেন না। আপনারা নামলে সেন্ট্রাল বাহিনীও নামবে। যদি দাঙ্গা করেন, দোকান ঘর পোড়ান, হিন্দু বাড়ি আক্রমণ করেন, তৃণমূলের কোনো নেতার ছেলে বা মেয়ের জীবন যাবেনা, দাঙ্গা থামাতে গুলি চললে, আপনার বাড়ির সদস্যদের গুলি লাগবে, জীবন যাবে। নেতারা কিন্তু এসি ঘরে বসে থাকবে। ভালো করে বুঝুন, যারা ভারতীয় মুসলমান তাঁদের নাম ভোটার লিস্টে থাকবে।”