ব্যুরো নিউজ ১৬ অক্টোবর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক অত্যাচারের অভিযোগ তুলে বুধবার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করল বিজেপি। কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত আয়োজিত হয় দলের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি। বিজেপির দাবি, রাজ্যের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে প্রান্তিক ও খেটে খাওয়া আদিবাসী সমাজ তৃণমূল সরকারের নিপীড়নের শিকার। অভিযোগ, সাধারণ আদিবাসী নারী থেকে বিধায়ক, সাংসদ—কেউই এই অত্যাচার থেকে বাদ যাচ্ছেন না। জল-জমি-জঙ্গল ও নারীদের সম্মান রক্ষার দাবিতে এই মিছিলে ব্যাপক জনসমাগমের আহ্বান জানানো হয়।
রুদ্রনীলের বক্তব্য: ‘পরিকল্পিত অত্যাচার’ ও ‘যুদ্ধ ঘোষণা’
বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ এই প্রতিবাদ প্রসঙ্গে নারী নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান।
তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি হল :
“নারীদের ওপরে একটা পরিকল্পিতভাবে অত্যাচার চলছে রাজ্যে! শোনা যাচ্ছে মেয়েদের রাতে বেরোনো যাবেনা, কার্যত তার এই উক্তি নারী সমাজের অগ্রগতির বিরুদ্ধে একটা চরম হুঙ্কার! মুখ্যমন্ত্রী নিদান দিচ্ছেন ইসলামিক দেশগুলিতে যেভাবে নারীদের বোরখার ভেতর ঢুকিয়ে ফেলা হয়, যেভাবে তাদের সমস্ত অধিকার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়ে ঠিক তেমনই শোনা যাচ্ছে নারী সুরক্ষ্ণা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা। যে নারীরা নিজেদের মতন করে বাঁচতে চাইছেন, কাজ করতে চাইছেন, যে নারী এই দেশকে শক্তিশালী বানানোর জন্য অবদান রাখতে চাইছেন, তাদের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল, তার বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ!”
অর্জুন সিংয়ের কটাক্ষ: ‘মমতাজীবী’ ও ‘কলঙ্কিত পুলিশ’
এদিন দুর্গাপুর প্রসঙ্গে মন্তব্য রেখে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং রাজ্যে বেড়ে চলা নারী নির্যাতনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী সমাজের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি হল :
“কালকে একটি ডিবেট দেখছিলাম। ঐখানে একজন ব্যক্তি খুব ভালো প্রশ্ন রাখলেন যে এত ধর্ষণ, রেপ, এত দুর্নীতি সমস্ত কিছু হচ্ছে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী সমাজ (শিল্পী, গায়ক, অভিনেতা, সাহিত্যিক) একটিও বিরোধিতা করছে না? কেন? বাংলার বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গোটা ভারতবর্ষের এখন প্রশ্ন উঠেছে। বঙ্গে বুদ্ধিজীবী আর নেই, একসময় বুদ্ধুজীবী হয়ে গেছিলেন আজ তারা ‘মমতাজীবী’, অনুদান নিয়ে ‘ভাতাজীবী’!”
তিনি আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন:
“মমতা ব্যানার্জি নিজে একজন মহিলা, উনি নিজেই যখন বক্তব্য রাখছেন যে তাঁর রাজভবনে যেতে ভয় করে, রাজভবনের সুরক্ষার দায়িত্ব তো পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের, সেই মমতা ব্যানার্জি এখন বলছে রাতে মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়া উচিত নয়? এর থেকে পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারে কী ধারণা হতে পারে? জঘন্য বিকট পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর যেখানে এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত নারী সুরক্ষার সেখানে উনি গোটা পুলিশ দফতরকে কলঙ্কিত করেছে। কলকাতা পুলিশ যাদের এক কালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা সুরক্ষার সাথে তুলনা হতো, তাদের এখন বাড়িতে নিযুক্ত সুরক্ষাকর্মীর পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। সিভিক ভলান্টিয়াররা এখন কলকাতা পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করছে।“
নারী সুরক্ষার অবনতি নিয়ে আশঙ্কা
বক্তব্যগুলি থেকে স্পষ্ট, রাজ্যে নারী সুরক্ষার অবনতি, ধর্ম-মত, দল নির্বিশেষে এখন প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এক চরম বাস্তবতা। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি দপ্তর সুরক্ষিত নয়, হাসপাতাল সুরক্ষিত নয়, বেসরকারি দপ্তর, জঙ্গল, বিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—কিছুই নারীদের জন্য সুরক্ষিত নয়। এছাড়া রাজনৈতিক হিংসা এবং খুন তো রয়েছেই। তাই বিজেপির গতকালের প্রতিবাদ মিছিলটি সাধারণ মানুষকে আসন্ন বিপদের ব্যাপারে সচেতন করার আরেকটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।