BJP Bankura WBP Suvendu Adhikari LOP

ব্যুরো নিউজ ১৬ জুন : পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রবিবার বাঁকুড়া জেলায় বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে পুলিশ ‘চোর-ডাকাতের মতো’ ঢুকে দরজা ভাঙার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনায় বাঁকুড়ার নতুনগঞ্জ এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রাত ২টা নাগাদ বাঁকুড়া সদর থানা ও খাতড়া থানার পুলিশ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগ ও বিজেপি কর্মীদের প্রতিরোধ

 শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ গভীর রাতে দলীয় কার্যালয়ের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। তিনি তাঁর এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি পোস্ট করে বলেছেন, “তথাকথিত ‘ক্ষমতার’ এই নির্লজ্জ প্রদর্শন আমাদের সাহসী বিজেপি কার্যকর্তা এবং স্থানীয় নেতাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল, যারা এই কাপুরুষোচিত ভীতিপ্রদর্শনমূলক কাজের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “মমতা পুলিশ কি এতটাই নিচে নেমে গেছে; রাতের অন্ধকারে বিরোধীদের কর্মীদের হেনস্থা করার জন্য লুকিয়ে ঘুরছে, যখন আসল অপরাধীদের দিকে তারা চোখ বন্ধ করে আছে?”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জ এলাকায় বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের আশেপাশে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন ছিল এবং তারা দলীয় কার্যালয়ের উপর কড়া নজর রাখছিল। অন্যান্য দিনের মতো গত রাতেও দলীয় কার্যালয়ের মূল গেটে তালা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা বাড়ি চলে যান। রাত ২টা নাগাদ বিজেপি কর্মীরা স্থানীয় সূত্রে খবর পান যে বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই দলীয় কার্যালয়ের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালাচ্ছে। খবর পেতেই স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ছুটে আসেন এবং বিজেপি কর্মীরা কার্যালয়ে জড়ো হতেই পুলিশ পিছু হটে।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

পুলিশের আচরণের কারণ ও শুভেন্দু অধিকারীর সমালোচনা

 যদিও কী কারণে পুলিশ এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে গভীর রাতে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালালো, তা এখনও জানা যায়নি। বিজেপির একাংশের ধারণা, শুক্রবার রাতে খাতড়ায় রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডির স্বামী তুহিন মান্ডি আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় যুক্তদের খোঁজে পুলিশ বিজেপির এই দলীয় কার্যালয়ে হানা দিয়ে থাকতে পারে।
শুভেন্দু অধিকারী পুলিশের এই আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে রাজ্য পুলিশ যখন তৃণমূলের ‘কুখ্যাত গুন্ডা’ অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয় থাকে, তখন তারা বিরোধী দলের কর্মীদের হয়রানি করে। তিনি উল্লেখ করেন যে সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিওতে অনুব্রত মণ্ডলকে একজন পুলিশ অফিসারকে “তাঁর মা এবং স্ত্রীকে ধর্ষণ করার” হুমকি দিতে শোনা গিয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তখন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

 শুভেন্দু অধিকারী গত সপ্তাহে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মহেশতলায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে মহেশতলায় মমতা পুলিশের ‘আত্মসমর্পণ’ করার ভঙ্গি কেউ ভুলতে পারবে না, যেখানে তারা পাথর নিক্ষেপকারী জিহাদিদের দিকে সাদা রুমাল নাড়িয়েছিল। রক্তচোষা কাপুরুষ।” তিনি আরও যোগ করেন যে, এই বছরের এপ্রিলে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে, দাঙ্গাবাজদের মুখোমুখি হয়ে জেলা পুলিশ বাহিনী দোকানে আশ্রয় নিয়েছিল।
অধিকারী আরও বলেছেন, “বাংলার মানুষ এমন একটি পুলিশ বাহিনীর চেয়ে ভালো কিছু প্রাপ্য, যারা বিরোধীদের এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করে কিন্তু তৃণমূলের গুন্ডা বা অন্যান্য আইন ভঙ্গকারীদের মুখোমুখি হলে লেজ গুটিয়ে নেয়, যারা তৃণমূল দলের আশ্রয়ে আছে। এটা আইন প্রয়োগ নয়, এটা ভাঁড়দের দ্বারা মঞ্চস্থ একটি নাটক, যারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছ থেকে সমস্ত সম্মান হারিয়েছে।”


ভিডিও প্রমাণ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
 দলীয় কার্যালয়ে রাতের বেলা বৈধ কারণ ও নথি ছাড়া অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টার জন্য পুলিশের নিন্দা করার পাশাপাশি অধিকারী একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে পুলিশকর্মীদের কার্যালয়ের ভেতরে কর্মীদের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বাঁকুড়া শহরে বড়সড় আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর