ব্যুরো নিউজ ২৪ জুন : বোলপুর থানার আইসি লিটন দাসকে ফোনে গালিগালাজ এবং অশ্লীল মন্তব্য করার অভিযোগে বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে পুলিশ ক্লিনচিট দেওয়ায় জাতীয় মহিলা কমিশন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এই ঘটনায় বীরভূমের পুলিশ সুপারকে আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে দিল্লিতে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
পুলিশের ‘দায়সারা’ রিপোর্ট
পুলিশের কাছে এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চেয়েছিল জাতীয় মহিলা কমিশন। বীরভূম পুলিশ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে যে, অনুব্রত মণ্ডল তদন্তে “ভীষণ সহযোগিতা” করছেন এবং তাঁকে এখনও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়েনি। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে অভিযোগকারীর দুটি মোবাইল ফোনের পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি এবং সেই রিপোর্ট আসার পরেই অভিযুক্তের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই ‘দায়সারা’ উত্তরে জাতীয় মহিলা কমিশন মোটেই সন্তুষ্ট নয়। কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন, “এই যে দায়সারা উত্তর, অনুব্রত খুব কোঅপারেটিভ, সব উত্তর সন্তোষজনক, ফরেন্সিকে দোষ ধরা পড়লে পুলিশ পদক্ষেপ করবে। এই সব রিপোর্টে কমিশন মোটেই সন্তুষ্ট নয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা মুখে বলি না, কাজেই করি। মহিলাদের উপর অত্যাচার হলে যদি কোনও মহিলা চুপ করে সহ্যও করেন, কমিশন ছাড়বে না।”
অনুব্রতর ক্ষমা প্রার্থনা ও তৃণমূলের শোকজ
গত মাসে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়, যেখানে অনুব্রত মণ্ডলকে বোলপুরের আইসি লিটন দাস এবং তাঁর স্ত্রী ও মাকে কদর্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়। যদিও এই অডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এই ঘটনার পর তৃণমূলের তরফে অনুব্রতকে শোকজ করা হয়েছিল। অনুব্রত সংবাদমাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, “আমি নানা রকম ওষুধ খাই। শুনলাম, আমাদের এক তৃণমূল কর্মীর ছেলেকে পুলিশ মারধর করেছে। নিরীহ ছেলে। ওটা শুনেই আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। ওই পুলিশও আমাকে খারাপ কথা বলেছে।” কিছুদিন আগে পুলিশকে হুমকি-বিতর্কের পর তিনি প্রথমবার দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন এবং তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
এসপিকে তলব ও কমিশনের প্রশ্ন
জাতীয় মহিলা কমিশন অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তে পুলিশের “অনীহার” অভিযোগে বীরভূমের পুলিশ সুপার, আইপিএস অমনদীপকে ১ জুলাই নয়াদিল্লিতে কমিশনের অফিসে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কমিশন জানতে চেয়েছে, কেন থানার সাইটে এফআইআর-এর কপি আপলোড করা হয়নি, যাতে মানুষ জানতে পারে পুলিশ কোন কোন ধারায় মামলা রুজু করেছে। পুলিশের রিপোর্টে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
এছাড়াও কমিশন জানতে চেয়েছে, কেন অনুব্রত মণ্ডলের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়নি এবং কেন জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও তিনি এতদিন বাইরে ছিলেন। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এসপি হাজিরা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। যদি এসপি আসতে না পারেন, তবে বোলপুরের অতিরিক্ত এসপি বা বোলপুরের এসডিপিও-কে একাধিক নথি নিয়ে দিল্লিতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসের শেষের দিকে অডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশ অনুব্রতকে তলব করে। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বারবার হাজিরা এড়িয়ে গেলেও, জুন মাসের ৫ তারিখে অনুব্রত ৯০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসেন।