ব্যুরো নিউজ ৯ এপ্রিল: কালীপুজো শেষ হতে না হতে, বাঙালি ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় আরেকটি উৎসব—ভাইফোঁটা। ভারতবর্ষের নানা অঞ্চলে ভাইফোঁটা বা ভাতৃদ্বিতীয়া নানা নামে পরিচিত, তবে বাঙালি ঘরোয়া পরিবেশে এই দিনটির বিশেষ নাম ভাইফোঁটা। যেখানে দিদিরা তাঁদের ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাদের মঙ্গল কামনা করেন। তবে, এই উৎসবের পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস এবং নানা পৌরাণিক কাহিনি, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মে চর্চিত হয়ে আসছে।
ভাইফোঁটার ঐতিহ্য এবং পৌরাণিক কাহিনী
ভাইফোঁটার এই ঐতিহ্যটি কবে থেকে শুরু হয়েছিল, সে সম্পর্কে নানা পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। পৌরাণিক গ্রন্থে বলা হয়, সূর্যদেব এবং দেবী শরন্যুর সন্তান ছিলেন যম এবং যমী। যমী ছিলেন যমুনা নদী। একসময়, যমুনা তাঁর ভাই যমের জন্য কপালে ফোঁটা দেওয়ার রীতি শুরু করেন। পরবর্তীতে এই প্রথাই ভাইফোঁটা বা ভাতৃদ্বিতীয়ার আকারে পত্তন লাভ করে। কাহিনির মূলে রয়েছে এক বিশেষ ঘটনা। একবার, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে যমুনা তাঁর ভাই যমকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু যম অনেক দিন ধরে ব্যস্ততার কারণে তার দিদির বাড়িতে আসতে পারেননি। অবশেষে একদিন যমুনা দেখেন, তার বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে তার ভাই যম। সেই আনন্দের মুহূর্তে, যমুনা ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন এবং নিজ হাতে তার জন্য বিভিন্ন পদ রান্না করে খাওয়ান। এই থেকেই ভাইফোঁটার উৎসবের সূচনা।
বৈশাখী উৎসবে সেরা এবং ইউনিক লুক পেতে জানুন এই স্টাইলিং টিপস!
এদিকে, যমরাজ তার দিদি যমুনাকে প্রতিজ্ঞা করতে বলেন যে, প্রতি বছর তিনি কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে তার কাছে ফোঁটা নেবেন এবং নিজ হাতে তাঁকে নানা পদ রান্না করে খাওয়াবেন। যমুনা সেই প্রতিজ্ঞা নেন এবং বলেন, যে সব দিদি বা বোনেরা এই দিন ভাইদের কপালে ফোঁটা দেবেন এবং নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবেন, তাদের কোনোদিন যমের ভয় থাকবে না। এছাড়া, যমুনার জলে স্নান করলে নরকযাত্রা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, এমন বিশ্বাসও প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া, যমরাজ আরো এক প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি বলেন, যে ভাই বা দাদা তার বোন বা দিদিকে অপমান করবে কিংবা অন্যায় করবে, তাকে তিনি যমপুরীতে নিয়ে যাবেন। আবার, যমুনার জলে স্নান করে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করলে, সে ভাই বা বোন স্বর্গলাভ করবে, এমনটি বিশ্বাস করা হয়।
সেলে হাট—সস্তায় জিনিসপত্র কেনার সেরা সময়!”
ভাইফোঁটার দিন, অনেক ভাই-বোন এই রীতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যমুনার জলে স্নান করে এবং সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন, যাতে তারা জীবনে সুখী ও সমৃদ্ধ হন। আজও, এই ঐতিহ্য ও রীতি বহু পরিবারে পালন করা হয়, এবং এটি শুধুমাত্র এক পরম্পরা নয়, বরং ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করার একটি উপায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।