ব্যুরো নিউজ ০১ জুলাই : আগামী বছর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এই আবহে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি জল্পনা চলছে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদ নিয়ে। মনে হচ্ছে, এই জল্পনার অবসান হতে চলেছে, কারণ আগামী ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার এই পদের জন্য নির্বাচন এবং নাম ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ ও নির্বাচন প্রক্রিয়া
ভারতীয় জনতা পার্টি সোমবার বেশ কয়েকটি রাজ্যে নতুন রাজ্য সভাপতি নিয়োগ করেছে। এর মধ্যেই বঙ্গ বিজেপিতে পরবর্তী রাজ্য সভাপতি নিয়ে চলমান জল্পনার মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। বিজেপি সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক নিযুক্ত করা হয়েছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, রবিশঙ্কর প্রসাদ বাংলায় একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার আওতায় রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের কাজ শুরু করবেন। এই প্রক্রিয়ায়, বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তাঁর পদে থাকবেন নাকি অন্য কাউকে এই দায়িত্ব দেওয়া হবে তা স্থির করা হবে। রবিশঙ্কর প্রসাদ রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা নেবেন এবং এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত নাম সামনে আসবে। রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের পাশাপাশি, রবিশঙ্কর প্রসাদ বিজেপির জাতীয় পরিষদে বাংলা থেকে কাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে তাও স্থির করবেন।
‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি ও সুকান্ত মজুমদারের ভবিষ্যৎ
পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। এই আবহে বিজেপির ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি অনুযায়ী, বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে আর রাজ্য সভাপতি রাখা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সুকান্ত মজুমদার বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন, যা ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সুকান্ত মজুমদার নিজেও আগে জানিয়েছেন, নতুন রাজ্য সভাপতি নিয়োগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।
শমীক ভট্টাচার্যের নাম ঘিরে জল্পনা
এই জল্পনার মধ্যেই রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের নাম সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। গত শনিবার রাজ্যের এক দলীয় কর্মসূচিতে বিজেপির এরাজ্যের পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল জানান, ২ জুলাই বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের মনোনয়ন হবে এবং ৩ জুলাই নাম ঘোষণা হবে। এরই মধ্যে সোমবার শমীক ভট্টাচার্য দিল্লি যান এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার বাসভবনে হাজির হন। সেখানে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদও উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে বুধবার শমীক একাই মনোনয়ন পেশ করবেন এবং বৃহস্পতিবার পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ও অগ্নিমিত্রা পালের নামও আলোচনায় রয়েছে।
কসবা কাণ্ডে প্রধান বিরোধী দল সরব অনুসন্ধানে এবং প্রতিবাদে !
শমীক ভট্টাচার্যের সম্ভাব্য নেতৃত্ব কেন?
বঙ্গ বিজেপির পুরনো নেতা শমীক ভট্টাচার্যকে নিয়ে দলের অন্দরে ইতিবাচক আলোচনা চলছে। বিজেপি যখন পশ্চিমবঙ্গে খুব শক্তিশালী ছিল না, তখন থেকেই তিনি দলের সঙ্গে যুক্ত। দলের একাংশের মতে, শমীক ভট্টাচার্যের মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে। তিনি যেমন প্রচারের মুখ, তেমনই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে দূরে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে এবং তিনি দলকে ‘পালিশ’ করে উপস্থাপন করতে পারেন বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেরই মত। সবচেয়ে বড় কথা, শমীককে নিয়ে দলের ভেতরে কোনও আপত্তির সুর শোনা যাচ্ছে না। অনেকেই মনে করছেন, ভোটের মুখে দল যদি ঝুঁকি নিতে না চায়, তবে এমন কাউকেই বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য।
জাতীয় সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া
জুলাই মাসেই সর্বভারতীয় সভাপতির নাম চূড়ান্ত করতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির সংবিধান অনুসারে, জাতীয় সভাপতির নির্বাচন তখনই শুরু হতে পারে যখন ৩৭টি রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ১৯টিতে রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হন। সোমবার পর্যন্ত, ১৬টি রাজ্যে নতুন সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার এই সংখ্যা ১৯ ছাড়িয়ে যাবে, যা জাতীয় সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার পথও প্রশস্ত করবে।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেছে দল। ২ জুলাই মনোনয়ন এবং ৩ জুলাই বরণ অনুষ্ঠান। এই নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক আগেই শমীকের দিল্লি সফরকে তাই কাকতালীয় বলছেন না কেউই।
