ব্যুরো নিউজ, ২৪শে ডিসেম্বর ২০২৫ : বাংলাদেশে নির্বাচনী আবহের মধ্যে অস্থিরতা থামার লক্ষণ নেই। একদিকে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, অন্যদিকে ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মারার নৃশংস ঘটনা সামনে এসেছে।
ময়মনসিংহে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড
বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় দিপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জানা গেছে, দিপু স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। রাত ৯টা নাগাদ একদল জনতা তাঁকে ঘিরে ধরে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ তোলে। উত্তেজিত জনতা তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পর একটি গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। তবে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যু ও উত্তপ্ত রাজপথ
গত সপ্তাহে নির্বাচনী প্রচারের সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়া ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ৩২ বছর বয়সী শরীফ ওসমান হাদী সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের এই পরিচিত মুখ আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছাতেই বাংলাদেশে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন এবং দোষীদের কঠোরতম শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন।
চট্টগ্রামে ভারতীয় মিশনে বিক্ষোভ ও হামলা
হাদীর সমর্থকদের দাবি, তাঁর হত্যাকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। এই অভিযোগে শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের খুলশিতে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা গেটের সামনে জড়ো হয়ে ভারত-বিরোধী এবং শেখ হাসিনা বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা হাই কমিশনের বাসভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। যদিও পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপে কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন, খুনিদের ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ভারতীয় হাই কমিশন বন্ধ করে দিতে হবে।
Bangladesh : বাংলাদেশের ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ভাঙা হচ্ছে, ভারতের হস্তক্ষেপ
নিরাপত্তা জোরদার ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
সিঙ্গাপুরের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, হাদীর মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য হাই কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশে ভারতীয় কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারকে নিরাপত্তার পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধান সন্দেহভাজনের পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

















