ব্যুরো নিউজ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : পাকিস্তানের বালুচিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সম্প্রতি, মাস্তুং-এর দাশত এলাকায় জাফর এক্সপ্রেস নামের একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এই হামলার দায় বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যারা সম্প্রতি বালুচিস্তানের বিভিন্ন জেলায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর উপর একাধিক সমন্বিত হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলোকে খাইবার পাখতুনখাওয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর পাকিস্তানের বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাফর এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণ ও আগের হামলা
মঙ্গলবার মাস্তুং-এর দাশত এলাকায় জাফর এক্সপ্রেসের রেললাইনে বিস্ফোরণের ফলে অন্তত তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে বহু যাত্রী আটকা পড়েন, এবং উদ্ধার কাজ শুরু হয়। যদিও হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি, এই ঘটনাটি এক মাসের মধ্যে একই ট্রেনে দ্বিতীয় হামলা। এর আগে, এক মাস আগে মাস্তুং জেলার স্পেজান্দ স্টেশনের কাছে একটি রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের ফলে জাফর এক্সপ্রেসের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছিল, যদিও সেবার কোনো প্রাণহানি হয়নি।
এই বছরের শুরুর দিকেও জাফর এক্সপ্রেসকে লক্ষ্য করে একটি ভয়াবহ হামলা হয়েছিল, যেখানে ২৫ জন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছিল। সেই হামলার দায়ও বিএলএ নিয়েছিল। সেই ঘটনায় বিএলএ জঙ্গিরা রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পর নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
বিএলএ-র সিরিজ হামলা
বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) জামুরান, কালাত, খারান, কোয়েটা এবং ধাদারসহ বালুচিস্তানের বেশ কয়েকটি জেলায় সমন্বিত হামলার দায় স্বীকার করেছে। বিএলএ-র মুখপাত্র জীয়ান্ড বালুচ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, তাদের যোদ্ধারা সাতটি ভিন্ন ভিন্ন অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। তারা একটি গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করারও দাবি করেছে।
বিএলএ-র দাবি অনুযায়ী, কোয়েটার একটি সেনা ক্যাম্পে স্নাইপার হামলায় একজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে এবং একটি সামরিক কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়াও, তারা কোয়েটাতে এক পুলিশ সদস্যকে আটক করে তার অস্ত্র জব্দ করেছে এবং ধাদারে একটি গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দিয়েছে। বিএলএ-র এই হামলাগুলোকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রতিশোধের রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত
বিভিন্ন রিপোর্টে এই হামলাগুলোকে খাইবার পাখতুনখাওয়ায় পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেখানে বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল। বালুচ ও পশতুন বিদ্রোহীরা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই পরিস্থিতি অনেকটাই আফগানিস্তানের তালেবানের যুদ্ধের মতো, যেখানে তালেবান দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অবশেষে ক্ষমতা দখল করে। এই ক্রমবর্ধমান সংঘাত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।